Site icon অবিশ্বাস

উখিয়া থানার ওসিসহ ৪ পুলিশের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ

কক্সবাজারের উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতারসহ চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করা হয়েছে।

২৫ আগস্ট মঙ্গলবার কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এ মামলাটি দায়ের করেন মহেশখালীর রিয়াদ সোলতানা নুরী (২২) নামের এক তরুণী।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন, কনস্টেবল মো. সুমন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম ও এএসআই মো. শামীম।

মামলার বাদী মহেশখালী উপজেলার কালারমারছরার ৬নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার বাসিন্দা নুরুচ্ছবির মেয়ে। তিনি কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

মামলাটি পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। নারী নির্যাতন আইনের ৯ (১) সহ মামলায় ৩২৩/৩২৪/৩৪২/৩৭৯/৫০৬ দণ্ডবিধি মতে অভিযোগ আনা হয়েছে।

নারী ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কনস্টেবল মো. সুমনের (বর্তমানে রাঙ্গামাটি পুলিশ সুপার কার্যালয়ে কর্মরত) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক রিয়াদ সোলতানা নুরীর। এ সুবাদে বিয়ের কাবিনের কথা বলে গত ৭ জুলাই বেলা দুইটার দিকে খুনিয়াপালং চেকপোস্ট সংলগ্ন তার কক্ষে নিয়ে যায়। কাজি আসার অপেক্ষার অজুহাতে কক্ষে বসিয়ে রাখে। পরে ধর্ষণ করে।

এরপর চেকপোস্টের পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে বসিয়ে রেখে জরুরি কাজের বাহানা দিয়ে পালিয়ে যায়। অবশেষে রাত ১১টার দিকে বিষয়টি অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে ফোনে জানান ভিকটিম রিয়াদ সোলতানা নুরী।

আরো উল্লেখ করা হয়, উখিয়া থানায় গেলে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন ওসি মর্জিনা আকতার। এরপর অভিযুক্ত অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় তাকে কক্ষে আটকিয়ে রেখে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতন চালানো হয়।

এমনকি পায়ে রশি ও পরনের হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে রাখারও অভিযোগ আনেন ভিকটিম। মামলার আরজির সঙ্গে নির্যাতনের কিছু ছবিও যোগ করেন তিনি।

নারী ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা বলেন, বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে, ৭ জুলাইয়ের ঘটনাটি প্রকাশের পর গণমাধ্যমকে তিনি বলেছিলেন, নুরীকে তার থানায় নির্যাতন করার তথ্যটি সঠিক নয়।

মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর স্টেশনে থেকে দায়িত্বপালন করা যায় কি না বা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, মামলার কাগজপত্র হাতে পেলে আইনের বিধি মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ।

এ ঘটনায় টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকেও যুক্ত করা হয়েছে। তারা সকলে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছেন।

এটি দেখেই বিভিন্ন থানায় পুলিশ কর্তৃক নানাভাবে ভুক্তভোগীরা পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করতে উদ্যোগী হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় নির্যাতিতা তরুণী নুরীও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

ইত্তেফাক

Exit mobile version