Site icon অবিশ্বাস

উজিরপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর বিএনপির নারকীয় তাণ্ডব চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি, তরুণীরা আতঙ্কে

বরিশালের উজিরপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের স্টিম রোলার চলছে। তাদের কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দেয়া হচ্ছে। অনেককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। এক সংখ্যালঘু তরুণীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে তার স্তনে কামড় দেয়া হয়েছে। আর এসব অভিযোগ আসছে চারদলেরনেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বরিশাল থেকে উজিরপুরের পথ বেশী দূরে নয়। ফেরির কারণে দেড় থেকে দু’ ঘন্টা লেগে যায়। পাখি ডাকা, ছায়া সুনিবিড় গ্রামীণ আর দশটি এলাকার মতই উজিরপুর উপজেলা। কিন্তু সেই শান্তির রূপটি নির্বাচনের পর থেকে যেন উধাও হয়ে গেছে। উজিরপুরে বিএনপির কর্মীরা তাণ্ডব শুরু করেছে নির্বাচনের দিন থেকেই। সেখান থেকে কোন খবর বাইরে আসছে না। এখানকার গ্রামগুলো এখন কার্যত আতংক আর গুজবের এলাকায় পরিণত হয়েছে। নির্বাচনের পরের দিনই এখানে আইয়ামে জাহলিয়াত কায়েম করে বিএনপি কর্মীরা। উজিরপুরে বিএনপি একটি হিট লিস্ট তৈরি করেছে বলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি আমাদের জানান, এ হিট লিস্টে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও স্থানীয় বেশ কিছু বিত্তবান সংখ্যালঘুর নাম রয়েছে। কথিত হিট লিস্টে নাম রয়েছে এমন অনেকেই এলাকা ছেড়েছেন। ঐ একই সূত্র জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবারের কন্যাসন্তানদের অন্যত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিনেই বিএনপির কর্মীরা টাটা বাড়ি কেন্দ্র থেকে ফেরার পথে এক সংখ্যালঘু তরুণীকে ডেকে নেয়। তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে তার স্তনে কামড়ে দেয়। সে তরুণীর পরিবার লোকলজ্জার কারণে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি। একই দিনে এখানকার হারতা ইউনিয়নের নয়াকান্দি ও নাথারকান্দি ভোটকেন্দ্রে সংখ্যালঘু নারীদের ভোট দিতে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এখানে বিএনপির বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সংখ্যালঘু নারীদের পথিমধ্যে বাধা দেয়। শুধু তাই নয়, নারীদের আটকাতে তাদের শাড়ি টেনে ধরে। ৩/৪ জন নারীর শাড়ি খুলে ফেলে এবং এক নারীর ব্লাউজ পর্যন্ত খুলে ফেলে। সম্ভ্রম হারানোর ভয়ে এ নারী আর ভোট কেন্দ্রে যায়নি। লোকলজ্জার ভয়ে এ নিয়ে কেউ টু শব্দটিও করেনি। বুধ ও বৃহস্পতিবার হারতা বাজারে কয়েক দফায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। তারা বিভিন্ন সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে নৌকায় ভোট দেবার কারণে গালিগালাজ করে। মনোজ সরকার নামে এক নিরীহ ব্যক্তিকে মারধর করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে যায়। তাদের তাণ্ডবে উজিরপুর বাজারের আতঙ্কিত ব্যবসায়ীরা দ্রুত দোকানপাট বন্ধ করে চলে যায়। এ বাজারে বেশ কয়েক ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা হয়েছে। প্রাণভয়ে কেউ স্বীকার করছে না। এরা বিদেশ হাজারী নামে এক সংখ্যালঘু ব্যাক্তিকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। তার কাছে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। সেই সাথে তাকে দেশ ছেড়ে চলে যাবার নির্দেশ দেয়। বৃহস্পতিবার রাতে এখানকার মাদাশী গ্রামে ব্যাপক তাণ্ডব চলেছে। এ গ্রামের দীপু ডাক্তারের বাড়িতে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদা না দিলে সন্ত্রাসীরা তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিয়েছে। একই গ্রামের মৃন্ময় মণ্ডল, নিখিল, নিহারকে তাদের বাড়িতে না পেয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। শুক্রবার সকালে সন্ত্রাসীরা মাদাশীর বিমল দাসেরবাড়িতে গিয়েতাদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। আশু হালদারকে তার পানের বরজ ̧লো তাদের দিয়ে দিতে বলেছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এখানে এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইকবাল। বামরাইল ইউনিয়নের গড়িয়া ও মুলপাইন গ্রামের ইউপি মেম্বার কালু হাজীর নেতৃত্বে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হয়রানি করা হচ্ছে। বুধ ও বৃহস্পতিবার সেখানে অনেক তাণ্ডব চলেছে। মুলপাইনে তিমির, লক্ষন, অধীর, রতন, নির্মলকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। গরিয়ার শিবু দে নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। চাঁদা না দিলে তার স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর অনেকে গ্রাম ছেড়ে নিজেদের আত্মীয়-পরিজনের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। জল্লা ইউনিয়নের কারফা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরেও নানাভাবে হয়রানি-নির্যাতন চলছে। হামলা ভাংচুর হয়েছে উজিরপুর তারাবাড়িতে।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ৬ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version