Site icon অবিশ্বাস

কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বসতি আক্রান্ত: বাড়ি-মন্দিরে আগুন, লুট

কক্সবাজারের রামু উপজেলায় কোরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ এনে দলবেধে বৌদ্ধবসতিতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে।

 

শনিবার দিবাগত রাত (২৯ সেপ্টেম্বর ) তিনটার মধ্যে কমপক্ষে ৬টি বৌদ্ধ মন্দিরসহ ২০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে শতাধিক বাড়ি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) সেলিম মো. জাহাঙ্গীর বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় হামলার কথা স্বীকার করেছেন।

রাত তিনটা দিকে এসপি জানান, রামু উপজেলা সদরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে আশপাশে তখনও উত্তেজনা ছিল।

তিনি বলেন, “বৌদ্ধ এলাকাগুলোয় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।”

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আক্রান্ত এলাকায় আধা সামরিক বাহিনী বিজিবি নেমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক সুরেশ বড়ুয়া।

রাত সাড়ে তিনটার দিকে রামু সদর উপজেলা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রামু মিঠাছড়ির বনবিহারে ও কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নিতিশ বড়ুয়া।

ওই এলাকায় বিমুক্তি বিদর্শন বাবনা কেন্দ্রে নির্মাণাধীন শতফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মুর্তি ভাংচুর করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

কক্সবাজারের ঝিলংজা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ছাত্রদলে কক্সবাজার জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন জিকু জানিয়েছেন, ঝিলংজার বিভিন্ন সংখ্যালঘু পল্লীকে ঘিরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা জড়ো হলে তিনি গিয়ে তাদের সরিয়ে দেন। তিনি পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে দাবি করেছেন।

“জামায়াতের লোকজন হামলার জন্য আবার জড়ো হওয়া চেষ্টা করছে।”

রামুর স্থানীয় লোকজন জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে কোরআন শরিফ অবমাননা করে ছবি সংযুক্ত করার অভিযোগ এনে শনিবার রাত ১০টায় একটি ইসলামি দলের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করা হয়।

মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, রামু উপজেলার বৌদ্ধ পাড়ার উত্তম বড়ুয়া নামের এক যুবকের ফেইসবুক একাউন্টে কোরআন অবমাননাকর ছবিটি পোস্ট করা হয়েছে। বক্তারা ওই যুবককে আটকের দাবি জানান।

সমাবেশ শেষ হওয়ার কিছু পর ফের আবারো একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে রামু বড়ুয়া পাড়ার দিকে এগিয়ে যায়। মিছিলটি ওই পাড়ায় পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে মিছিলের কয়েকজন যুবক বড়ুয়াদের কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।

এরপর কমপক্ষে ১৫টি বসত বাড়ি,সাদা চিং ও লাল চিং নামের দুইটিসহ তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাঙচুর হয় শতাধিক বাড়ি বলে জানান তারা।

ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত দেড়টাতেও অগ্নিকাণ্ড অব্যাহত ছিল। পুলিশ সহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছিলেন।

স্থানীয় দীপক বড়ুয়া জানান, ৩টা মন্দির, বাড়ি ১৫টি সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা।

স্থানীয় এক সাংবাদিক আক্রান্ত এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার বাড়ির পাশের চেরাংঘাটা বড়ক্যাং মন্দিরটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাত পৌনে তিনটায় তিনি বলেন, ওই মন্দিরে আগুন নিভে গেছে।

এছাড়া, রামু মৈত্রী বিহার,রামু সীনা বিহার ও জাদীপাড়া বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

সবকটি মন্দিরে ভাংচুর ও লুটতরাজ করা হয়েছে।

কমপক্ষে ১০টি বৌদ্ধ গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। পূর্ব মেরোংলোয়া পাড়াটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ১০/২০টি ঘর ছিল বলে জানান তিনি।

রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল জানান, উত্তেজনার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এদিকে, কয়েকজন ফেইসবুক ইউজার জানিয়েছেন, উত্তম বড়ুয়া নামের রামুর যুবকের ফেইসবুকে কোরআন অবমাননাকর ছবিটি তার পোস্ট করা নয়। এরজন্য উত্তম কোনোভাবে দায়ী নয়। ‘ইনসাল্ট আল্লাহ’ নামের এক ফেইসবুক আইডি থেকেই ছবিটি শেয়ার/ট্যাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তারা।

সাম্প্রতিককালে সীমান্তের ওপারে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার পর তাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা নিয়ে ব্যাপক শোরগোল তৈরি হয়। বাংলাদেশ সরকার অনুপ্রবেশ ঠেকালে দেশের নাগরিক সমাজের একটি অংশ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। সরকার এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক শক্তির ইন্ধন ছিল বলে মনে করছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Exit mobile version