Site icon অবিশ্বাস

কুষ্টিয়ায় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর

জাতির পিতার ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনার রেশ না কাটতেই কুষ্টিয়ায় এবার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।

কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন পরিষদের কয়া গ্রামে ১৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে বলে ইউপি চেয়ারম্যার জিয়াউল হক স্বপন জানান।

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের কলেজের অধ্যক্ষসহ চারজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

কুমারখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম খান বলেন, কয়া গ্রামের বাঘা যতীন কলেজ চত্বরে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর বিপ্লবী বাঘা যতীনের এই আবক্ষ মূর্তিটি স্থাপন করা হয়।

“কে বা কারা রাতের আঁধারে ভাস্কর্যটির মুখের ডানপাশ এবং নাকের উপর আঘাত করে ভেঙে দিয়েছে। শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা দেখার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।”

কুমারখালী থানার ওসি মজিবুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

“ইতোমধ্যে পুলিশের বিভিন্ন গোয়েন্দা ইউনিট এ ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।”

এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাঘা যতীন ডিগ্রি কলেজের সভাপতি নিজামুল হক চুন্নু, অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ, নৈশ প্রহরী খলিলুর রহমান ও কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিচুর রহমানকে আটক করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এস এম তানভির আরাফাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, এই মাসের শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের পর সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে জেলা প্রশাসন, পুলিশসহ প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানেই ভাস্কর্য আছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“কিন্তু এখানে বাঘা যতীনের আবক্ষ ভাস্কর্যটি আছে সেটা আমাদের জানানো হয়নি। সে কারণে কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না। আটক তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সংগঠন ‘যুগান্তর দলে’র নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে। খালি হাতে বাঘ মারার কারণে তিনি ‘বাঘা যতীন’ নাম পান।

১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হন যতীন। সে সময় তার বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর।

মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলে তার বিরোধিতা শুরু করেন কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের জোট হেফাজতে ইসলামের নেতারা।

হেফাজতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক ভাস্কর্য তৈরি করা হলে তা ‘বুড়িগঙ্গায় ফেলার’ হুমকি দেন। এরপর চট্টগ্রামে এক ধর্মীয় সভায় হেফাজত আমির জুনাইদ বাবুনগরী যে কারও ভাস্কর্য তৈরি করা হলে ‘টেনেহিঁচড়ে’ ভেঙে ফেলার হুমকি দেন।

এ নিয়ে প্রতিবাদের মধ্যেই ৪ ডিসেম্বর রাতে কুষ্টিয়ায় জাতির পিতার একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়। ওই ঘটনায় স্থানীয় এক মাদ্রাসার দুই ছাত্র এবং দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

Exit mobile version