Site icon অবিশ্বাস

কেরানীগঞ্জ থানার ওসিসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকের মো. যোবায়েরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন এক মানবাধিকারকর্মী।

মঙ্গলবার (১১ জুন) ঢাকা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এর বিচারক শহিদুল ইসলামের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি ।

ট্রাইব্যুনাল মামলার বাদীর ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন। বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন পেশকার সাইফুল ইসলাম।

সাইফুল ইসলাম জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন– গোলাম সারোয়ার (ওসি–অপারেশন), রেজাউল আমিন বাশার (এসআই), মো. ফারুক ( ৩৫), হায়দার (৬০), মো. ইকবাল (৩৫), মো. হানিফ (৫০), মো. হানিফ মেম্বর (৬০), মো. রফিক (৪০), মো. শফিক (৩৫) ও মো. বাবুল ওরফে মধু (৩৫)।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, গত ২০ এপ্রিল দুপুর ১টায় সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে কেরানীগঞ্জ যাচ্ছিলেন বাদী। আরশিনগর আমিন মাতবরের সিমেন্টের দোকানের সামনে পৌঁছালে তিনি দেখেন, ২০-৩০ জন লোক আরও কিছু লোককে ধাওয়া করছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে বাদী জানতে পারেন, চাঁদা না দেওয়ায় স্যুয়ারেজ লাইনের ঠিকাদার আমিন মাতবরের লোকদের ধাওয়া করেছে ওই ২০-৩০ জন লোক।

এটা শুনে পুলিশের হেল্প-লাইনে (৯৯৯) ফোন করেন বাদী। এটা দেখে ফেললে ধাওয়াকারীরা হামলা করে বাদীর ওপর। এসময় হামলাকারীরা বাদীকে মারধর করার পাশাপাশি শ্লীলতাহানী করে। এসময় বাদীর দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের হার নিয়ে যান আসামি ইকবাল। এদিন বাদীকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢাকার মিডফোর্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পুলিশ। চিকিৎসা শেষে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে চাইলে তা না নিয়ে ওসি যোবারের, ওসি গোলাম সারোয়ার বাদীকে আসামিদের সঙ্গে আপস করতে বলেন। এসময় দুই ওসি বাদীকে ধমকও দেন।

নথিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, গত ২৪ এপ্রিল বিকেল ৫টায় নিজ কর্মস্থল মতিঝিল যান বাদী। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত ১১টায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকার ঘাটখরচর প্রাইমারি স্কুলের সামনে পৌঁছালে বাদীকে রিকশা থেকে নামিয়ে ওই স্কুলের পেছনে নিয়ে যায় আসামি হায়দার, রফিক, শফিক এবং আরও অজ্ঞাত দু’জন। এসময় তাকে ধর্ষণ করা হয় এবং এ ঘটনা প্রকাশ করলে হত্যা করে লাশ গুমের হুমকি দেওয়া হয়।

পরে এদিন রাতে বাদীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই ২৭ এপ্রিল এ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় বাদীকে। গত ৩ মে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলে মিডফোর্ট হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বাদী। চিকিৎসকরা জানান, পেটে আঘাত পাওয়ায় তার বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে। এসময় তাকে ওষুধ দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাদীর অভিযোগ, আসামিদের তদবিরে দুই হাসপাতাল থেকে তিনি যথাযথ চিকিৎসা পাননি।

মামলার নথিতে প্রকাশ, এসব বিষয় পরে পুলিশকে জানালে তারা মামলা নেয়। কিন্তু আবারও পুলিশ আসামিদের সঙ্গে বাদীকে আপস করার পরামর্শ দেয়।

নথিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ মে ঈদের কেনাকাটা করতে বাসা থেকে বের হলে রাত ৯টার দিকে বছিলা ব্রিজের পূর্বপাশে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সামনে বাদীকে রিকশা থেকে নামায় আসামিরা। এসময় আসামিরা তাকে মাইক্রোবাসে তোলার জন্য টানা-হেঁচড়া শুরু করলে রিকশাচালক চিৎকার শুরু করেন। এতে আসামিরা বাদীকে ছেড়ে পালায়। কিন্তু যাওয়ার আগে তারা বাদীকে হুমকি দিয়ে যায়, ‘তোর দিন শেষ হয়ে আসছে, তুই আর বাঁচতে পারবি না’।

বাদী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৯(১)/৩০ ধারাসহ দণ্ডবিধি৩২৩/৩২৬/৩০৭/৩১২/৩৭৯/৩৫৪/৫০৬ মামলাটি করেন। মামলায় ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

বাংলা নিউজ

Exit mobile version