কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও মেধা তালিকায় একজনের নাম আসার তথ্য গণমাধ্যমকে জানানোর অভিযোগে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সিন্ডিকেট।
তবে গাফিলতির সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও এক শিক্ষার্থী মেধা তালিকায় ১২তম হয়। এই অসঙ্গতির বিষয়টি বি-ইউনিট কমিটিকে জানায় প্রবেশপত্র বাছাই কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। পরে গণমাধ্যমে ঘটনাটি উঠে এলে দুটি তদন্ত কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কার অবহেলায় এই ঘটনা ঘটল আর কীভাবে এই কথা গণমাধ্যম জানতে পারল তা খুঁজে বের করতে বলা হয় দুই তদন্ত কমিটিকে।
প্রথম তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হক টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরীক্ষার্থীর ভুল এবং কক্ষ পরিদর্শকের গাফিলতিতে মেধা তালিকায় সমস্যা হয়েছিল বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। এই কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার ক্ষেত্রে মাহবুবুল হক ভূঁইয়া জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ আমরা পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রবেশপত্র বাছাই কমিটি ইউনিট কমিটিকে মেধা তালিকায় অসঙ্গতির কথা জানালেও ইউনিট কমিটি টেকনিক্যাল কমিটিকে বিষয়টি জানায়নি।’
দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি সাংবাদিকের সঙ্গে ফোনালাপ এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মাহবুবুল হককে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
দ্বিতীয় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ্য ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘একজন পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর পূরণে ভুল করার প্রমাণ পেয়েছি। তাছাড়া, যারা পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল তাদের গাফিলতি এবং ডিনেরও দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি।’
‘গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার ২৬ সেকেন্ড আগেও মাহবুবুল হক ভূঁইয়া এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছে। তাছাড়া বিভিন্ন কল রেকর্ড এবং গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা গণমাধ্যমকে মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার তথ্য দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছি,’ তিনি বলেন।
সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়া কীভাবে অপরাধ হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের এটা তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে আমরা যা পেয়েছি তাই জানিয়েছি। তার ব্যাপারে পরবর্তীতে যারা আবার তদন্ত করবেন তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
যাদের গাফিলতিতে এটা ঘটল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যারা গাফিলতির সঙ্গে জড়িত আমরা সবার নাম উল্লেখ করেছি। পরবর্তী কমিটি বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।’
অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাকে অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি। তবে গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। ওই ইউনিটের আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও ডিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে গণমাধ্যমে কে তথ্য দিয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত করা হয়েছে। আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই বিষয়টি এখনও তদন্তাধীন। তাই এখন কথা বলা ঠিক না।’
‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ অনুসারে বিষয়টি আবার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি কোনো অন্যায় হয় তবে শাস্তি হবে আর অন্যায় না হলে শাস্তি পাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট চাইলেই ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এর জন্য দেশের আইন রয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।