Site icon অবিশ্বাস

গলাচিপার হরিপদ শীলকে দিগম্বর করে বাজারে ঘোরানো হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামির ছোট ভাইয়ের নির্দেশে

হরিপদ শীল সেই লজ্জার কথা ভুলে যেতে চান। ভুলে যেতে চান তার গ্লানি। নৌকায় ভোট দেয়ার অভিযোগে মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল। প্রথম দফায় তাকে ধরে এনে মারধর করা হয়। তারপর প্রকাশ্য দিনের বেলায় শত শত মানুষের সামনে হরিপদ শীলকে উলঙ্গ করে পুরো বাজার ঘোরানো হয়। নগ্ন অবস্থাতেই পুকুরে সাঁতার দিতে বাধ্য করা হয়। বাহেরচর বাজারেই তার পানের দোকান। আর এ বাজারেই চেনাজানা মানুষের সামনে ঘটে এ ঘটনা। হরিপদ শীল তার এ কষ্টের কথা কাউকে বলতে চান না। নির্বাচনের কয়েকদিন পরই এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি মেজর মহিউদ্দিনের ছোট ভাই ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল হাই তালুকদার হরিপদ শীলকে এমন সাজা দেয়। এখানকার বেশিরভাগ ঘটনার নায়ক আব্দুল হাই তালুকদার ও মুনীর তালুকদার। নির্বাচনের পর থেকে গলাচিপায় নবগঠিত থানা রাঙ্গাবালীতে তারা মধ্যযুগীয় এসব ঘটনা ঘটিয়েছে। শহরের চেয়ে গ্রামগুলোতে নির্বাচনী সহিংসতার ভয়াবহতা আরো বেশি। তেমনই এক জনপদ গলাচিপার রাঙ্গাবালী থানার আওতাধীন পাঁচটি ইউনিয়ন। গলাচিপা সদর থেকে অন্তত আট ঘন্টা সময় লেগে যায় সেখানে পৌঁছাতে। গলাচিপা সদরের কেউ এখানে আসতে চান না। এমনকি নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও এখানে পা রাখেন সাধারণত নির্বাচনের সময়। চাঁদাবাজি, লুটপাট, ভাঙচুর হয়েছে, হচ্ছে। এখনো অনেকে এলাকায় উঠতে পারছে না। তাদের ওপর মোটা অংকের চাঁদা ধরা হয়েছে। চাঁদা না দিয়ে তারা এলাকায় আসতে পারবেন না বলে বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন। এই দীপাঞ্চলের মানুষেরা নির্যাতনের শিকার হলেও মুখ খুলতে চান না। তাদের ধারণা, এসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি হলে তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়বে বৈ কমবে না। আমাদের সঙ্গে যারা কথা বলেছেন, তাদের ভয়ার্ত দৃষ্টি আর কাকুতি-মিনতি ছিলো নাম প্রকাশ না করার জন্য। হরিপদ শীলের ওপর এমন নির্যাতন হলেও তিনি পুলিশের এএসপির কাছে মুখ খোলেননি। আবদুল হাই তালুকদারের অর্ধশত সন্ত্রাসী রাঙ্গাবালীর গঙ্গিপাড়া বিস্তার একত্রিশটি ঘর দিনেদুপুরে হামলা করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। এই বিস্তার লোকজন আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। এখন বেশিরভাগ ঘর ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে আছে। অনেকে প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়েছেন। একই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ কাজীর হাওলা গ্রামে মাছের খামার দখল করে। এখানকার খ্যাতনামা দাসের বাড়ি দখলের জন্য বিএনপির জালাল ফরাজীর নেতৃত্বে মিছিল শুরু হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ও বিএনপির বাবলু বাধা দেয়ায় তা সফল হয়নি। এমনকি রাঙ্গাবালী আশ্রয়ণ প্রকল্পেও তারা হামলা করেছে। রাঙ্গাবালীর মানুষ এখনো আতঙ্কে আছেন। তাদের ধারণা, এখনো দুঃস্বপ্নের শেষ হয়নি।

দৈনিক জনকন্ঠ, ৭ নবেম্বর ২০০১

Exit mobile version