Site icon অবিশ্বাস

গোপালগঞ্জে ছাত্রীকে ধর্ষণের পর অপহরণ, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মেম্বারের চেষ্টা!

গোপালগঞ্জে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে এক গৃহশিক্ষক ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এরপর ওই ছাত্রীকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে তাকে সেখান থেকে অপহরণ করা হয়।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীর সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ১০ এপ্রিল রাতে গোপালগঞ্জ সদর থানায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র দত্ত বাদী হয়ে ধর্ষণ এবং অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে শিক্ষক মনোজ কুমার বিশ্বাস ও তার ভাই শাহজাহান শেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে।

অভিযোগ আছে, অভিযুক্ত মনোজ কুমার বিশ্বাসকে বাঁচাতে চেষ্টা করছেন দুর্গপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার হাসান শেখ। তিনি মনোজকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পাশাপাশি ওই ইউপি মেম্বারের ভাই শাহজাহান শেখ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মেম্বারের ভয়ে স্কুলছাত্রীর মা-বাবা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ঘটনায় গ্রামের মানুষের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুরেশ চন্দ্র দত্ত বলেন, হাতিকাটা গ্রামের উত্তম বিশ্বাসের ছেলে মনোজ কুমার বিশ্বাস। তিনি তার প্রতিবেশী ওই ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন। ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে ৩য় শ্রেণিতে পড়ার সময় ছাত্রীটিকে মনোজ তার বাড়িতে নিয়ে গত বছরের ১ নভেম্বর প্রথম ধর্ষণ করেন। এরপর গত ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তাকে জোর করে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি কাউকে জানালে তাকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেন তিনি।

পরে ওই ছাত্রী বিষয়টি তার সহপাঠীদের জানায়। গত ৯ এপ্রিল স্কুলে এসে ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় তার রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে ইউপি চেয়ারম্যান, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, ইউপি মেম্বার, স্থানীয় ক্লাবের সভাপতি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে ওই ছাত্রী ঘটনার বর্ণনা দেয়।

সে জানায়, তাকে নির্যাতন করতেন মনোজ কুমার বিশ্বাস। ধর্ষণের সময় তার হাত-পা ধরে মিনতি করার পরও রক্ষা পায়নি ছাত্রী। এ সময় তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়। পরে তাকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে ওই দিন রাতেই ওই ছাত্রীকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ইউপি মেম্বার হাসান মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মনোজকে পালাতে সহায়তা করেছেন। হাসান ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। ইউপি মেম্বারের ভাই শাহজাহান ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে ২/৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীকে হাসপাতাল থেকে অপহরণ করেছেন। এছাড়া মেম্বার বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে ওই ছাত্রীর পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন।

অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার হাসান শেখ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত ৯ এপ্রিল আমি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে থানায় যাই। থানা থেকে এসআই বকুলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আমার সঙ্গে ঘটনাস্থলে আসে। সেখানে উপস্থিত হয়ে জানতে পারি, আমার ভাই শাহজাহান আসামি মনোজকে নিয়ে পালিয়েছে। তারপর থেকে মনোজ ও শাহজাহান পলাতক রয়েছে।

মেম্বার আরও বলেন, ওই দিন রাতে হাসপাতাল থেকে ওই ছাত্রীকে কে বা কারা অপহরণ করে নিয়ে গেছে তা আমার জানা নেই। তবে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। মনোজ আমার দল করতো। কিন্তু তাকে পালিয়ে যেতে আমি কোন সহায়তা করিনি। এমনকি টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে আমি চেষ্টা করছি না। ওই ছাত্রীর মা-বাবাকে আমি কোন ভয়ভীতি দেখাইনি। তারা হয়তো আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছে। প্রতিপক্ষ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোপালগঞ্জ সদর থানার এসআই বকুল বলেন, হাসপাতাল থেকে ওই ছাত্রীকে কৌশলে শাহজাহানসহ ৩/৪ জন অপহরণ করে নেয়। এ কারণে ওই ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি। ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতেই ওই ছাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছি।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ইত্তেফাক

Exit mobile version