Site icon অবিশ্বাস

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় ৩টি ধর্ষণ ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রভাবশালী মহলের নানা অপতৎপরতা

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া এলাকায় তিনটি ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একটি ঘটনায় স্থানীয় এক শীর্ষ বিএনপি নেতার প্রকাশ্য বাধায় ধর্ষিতা মামলা করতে পারছে না। ঘটনাটি স্থানীয় এমপিকে জানানো হলেও কোনো কাজ হয়নি। আগৈলঝাড়ায় অপর এক ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তোয়াক্কা না করেই সালিসের নামে ধর্ষককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অপর ঘটনায় গৌরনদীর এক গ্রামে এক সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণের পর থানায় মামলা এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল আসামিকে ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী মহল জড়িয়ে পড়ায় তাদের কিছুই করার থাকছে না। জানা গেছে, এক মাস আগে গৌরনদীর বিলস্ত গ্রামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ফারুক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয় এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় ধর্ষিতার পক্ষ থেকে থানায় মামলা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মামলা না করার জন্য বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয় ওই পরিবারকে। এর নেপথ্যের কারণ হিসেবে জানা যায়, ওই ধর্ষক ইউপি সদস্যের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে ̄স্থানীয় বিএনপির একটি প্রভাবশালী মহল। যারা মামলায় না গিয়ে ঘটনাটি ‘সালিসের’ মাধ্যমে মীমাংসার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মূল কলকাঠি নাড়ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নূর আলম হাওলাদার। কয়েক দফা সালিসের তারিখ নির্ধারণ করেও ওই বিএনপি নেতা নিজেই তা স্থগিত ঘোষণা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে নূর আলম হাওলাদার বলেছেন, সালিস কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়ায় ওই সালিস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে আগৈলঝাড়ায় বাকাল ইউপির সদস্য রশিদ সিকদারের ছোট ভাই সোবাহান সিকদার কর্তৃক ধর্ষিত হয় এক কিশোরী। এ ঘটনায় ধর্ষিতার ফুপা বাদী হয়ে স্থানীয় থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ধর্ষকপক্ষ আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে স্থানীয়ভাবে সালিস মীমাংসার পদক্ষেপ নেয়। ধর্ষকের ভাই ইউপি মেম্বার রশিদ সিকদারের উদ্যেগে গত ১১ মে তার নিজ বাড়িতে নিজসব কিছু লোকজন নিয়ে এক বৈঠকে বসে ধর্ষককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে বাদীপক্ষকে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য চাপ দেয়। গত ১৬ মে রাতে গৌরনদীর চর শরিকল এলাকায় ̄সবামীর হাত-পা বেঁধে রেখে এক সংখ্যালঘু গৃহবধূকে ধর্ষণ করে এক নরপশু। এ ঘটনায় পরদিন মামলা দায়ের হলেও বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল থেকে তদবির শুরু হয়ে যায় প্রশাসনের কাছে। আর ধর্ষক এলাকায় মুক্তভাবে ঘুরছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনা সম্পর্কে গত রোববার বরিশালের পুলিশ সুপার মোহসিন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতা জানান, ধর্ষণের মতো ঘটনাকে আইনের হাতে ছেড়ে না দিয়ে সালিস করাও বেআইনি আর সরকারি দলের কেউ এসব সালিসে জড়িত হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার।

প্রথম আলো, ২২ মে ২০০২

Exit mobile version