মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার পালপাড়ায় রাতভর পাশবিক নির্যাতনের শিকার দুই সংখ্যালঘু তরুণীর ইজ্জতের মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১৯ হাজার ৫শ’ টাকা। এ মূল্য নির্ধারণ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষনেতারা সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে। ৯ অক্টোবর রাতে শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়নের নহাটা গ্রামের পালপাড়ায় একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। ওই গ্রামের অনিল পাল, নিখিল পালসহ কয়েকজনের বাড়িতে ভাঙচুর, মারপিট ও লুটপাট করার এক পর্যায়ে কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া দুই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে রাতভর নির্যাতন চালায়। পাশের গ্রামের বাকি মিয়ার নেতৃত্বে মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর, বাবলু, আবু সাইদ কিনানসহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী এ হামলা ও নির্যাতন চালায়। বর্বরোচিত এ ঘটনা দৈনিক ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়। জাতীয় পর্যায়ের একাধিক নারী সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন ঘটনার তদন্তে মাগুরায় আসেন। ঘটনার পরদিন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে থানায় মামলা দায়ের হয়। প্রধান আসামী মিজানুর রহমানসহ পুলিশ ৩ আসামিকে গ্রেফতার করে। মিজানুর রহমান মচৃজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পুলিশ তদন্তশেষে সকল আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় চার্জশিট দাখিল করে। পুলিশের ভূমিকা সুধীমহলে প্রশংসিত হয়। এত কিছুর পরও এ মামলার ভবিস্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ১২ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী আমতৈল দাখিল মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত এক সালিশি বৈঠকে দুই তরুণীর ইজ্জত, ভাঙচুর, লুটপাট ও হামলায় আহতদের চিকিৎসা মিলিয়ে মোট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫শ’ টাকা। এ মূল্যের বিনিময়ে মামলার বাদিকে বিচারাধীন মামলা দু’টিতে অভিযুক্ত আসামিদের অনুকূলে সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে। অন্যদিকে, আসামিরা ভবিস্যতে পালপাড়ার সংখ্যালঘুদের ওপর আর কোন হামলা ও নির্যাতন চালাবে না। এ সালিশি বৈঠকের মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন জেলা বিএনপির একজন ও জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতাসহ উভয় দলের স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দ। উল্লেখ্য, এ বর্বরোচিত ঘটনার পর আসামিদের অব্যাহত হুমকির মুখে নির্যাতিতা এক তরুণীকে যশোরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। নির্যাতিতা অন্য তরুণীকে নিয়ে তার পরিবার জেলা সদরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ওই পাড়ায় সকল পরিবারই তাদের যুবতী-তরুণী মেয়েদের অন্যত্র নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সংবাদ, ২৮ মে ২০০২