Site icon অবিশ্বাস

জামালপুরে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ চেষ্টায় গৃহকর্তা কারাগারে

জামালপুরে গৃহকর্তার কবল থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে পাইপের সাথে উড়না বেঁধে পালানোর সময় দোতলা বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন ওই বাড়ির গৃহপরিচারিকা এক কিশোরী। তার বয়স আনুমানিক ১৪ বছর। তাকে জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ‘৯৯৯’ থেকে ফোন পেয়ে ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতেই জামালপুর সদর থানার পুলিশ ওই গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে (৩৬) আটক করেছে। এ ব্যাপারে ওই কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আসামি করে শুক্রবার দুপুরে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলার পর বিকালে আসামি আবুল কাশেমকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছে সদর থানা পুলিশ।

আবুল কাশেম জামালপুর সদর উপজেলার রানাগাছা ইউনিয়নের দড়িহামিদপুর গ্রামের জাফর আলীর ছেলে। তিনি সৃষ্টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ জামালপুর শাখার সাবেক শিক্ষক এবং বর্তমানে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন তার স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু। এই দম্পতি জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় জনৈক আসাদুজ্জামানের বাসার দোতলায় ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করেন।

অপরদিকে ধর্ষণের চেষ্টার শিকার ওই কিশোরী ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার আকুনপাড়া গ্রামের একজন বাবুর্চির মেয়ে। তারা প্রায় সাত বছর ধরে জামালপুর শহরের খামারবাড়ি এলাকায় জনৈক আসাদুজ্জামানের বাসার ভাড়াটে। ওই কিশোরী তাদের বাসার কাছেই আবুল কাশেমের বাসায় প্রায় তিন বছর ধরে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করে আসছে।

অভিযোগে জানা গেছে, গৃহকর্তা আবুল কাশেমের স্ত্রী আনজু মনোয়ারা রিতু তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সৃষ্টি স্কুল এন্ড কলেজে একটি জরুরি সভায় অংশ নিতে গতবৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তাদের বাসার গৃহপরিচারিকা ওই কিশোরী রান্নাঘরে কাজ করছিল। গৃহকর্তা আবুল কাশেম রান্না ঘরে গিয়ে ওই কিশোরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তাকে জোর করে কোলে নিয়ে শোবার ঘরে বিছানায় নিয়ে যান। সেখানে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন তিনি।

এ সময় ওই কিশোরী গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে ধাক্কা মেরে বাসার ছাদে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আবুল কাশেমও পিছু নিয়ে ছাদে গিয়ে আবার তাকে জড়িয়ে ধরে নিচে নামানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে ওই কিশোরী তার সম্ভ্রম ও আত্মরক্ষায় দোতলার ছাদের পানির পাইপের সাথে নিজের উড়না বেঁধে নিচে নামার চেষ্টার সময় মাটিতে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় সে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলের কাছেই তাদের ভাড়া বাসায় গিয়ে তার মাকে ঘটনা খুলে বলে। ছাদ থেকে পড়ে সে দুই পা, হাটুসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ছিলে গিয়ে মারাত্মক জখমও হয়েছে। একই সাথে সে ভীষণ ভয়ও পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় জামালপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ওই কিশোরীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, ‘গৃহকর্তা আবুল কাশেম কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তিনি কাউকে কিছু না বলার জন্য আমার মেয়ে ভয় দেখাতেন। আমার মেয়েটারে আল্লায় বাঁচাইছে। আমি আবুল কাশেমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এদিকে বাসার ছাদ থেকে এক কিশোরী পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় কে বা কারা ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান। ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন আসে জামালপুর সদর থানায়। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেমুজ্জামান গত বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযান চালিয়ে খামারবাড়ির ওই বাসা থেকে গৃহকর্তা আবুল কাশেমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেমুজ্জামান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই খামারবাড়ির ওই বাসা থেকে গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণের চেষ্টাকারী আবুল কাশেমকে আটক করা হয়েছে। মামলা করে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গুরুতর আহত ওই কিশোরী জামালপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।’

ঢাকা টাইমস

Exit mobile version