Site icon অবিশ্বাস

ঝিনাইদহাটেল ব্যবসায়ী অধ্যাপকের কাছ থেকে টাকা আদায় ২ দারোগার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ

ঝিনাইদহে হোটেল ব্যবসায়ী অধ্যাপকের কাছ থেকে টাকা আদায় ২ দারোগার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ঝিনাইদহ সদর থানার দুজন দারোগা একজন সংখ্যালঘু অধ্যাপককে মধ্যরাতে ঘুম থেকে তুলে থানায় আটকিয়ে লাঞ্ছিত করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। আবাসিক হোটেল থেকে ধৃত একজন মহিলাকে ধর্ষণসহ অন্য বোর্ডারদের কাছ থেকেও টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিত্যানন্দ সাহা নিতু নারিকেল বাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি ঝিনাইদহের একজন স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ। ঝিনাইদহ সদর থানার সামনে তার একটি ফার্মেসি ও উপর তলায় একটি আবাসিক হোটেল আছে। নিত্যানন্দ সাহা নিতু জানান, গত ৯ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে সদর থানার এসআই বাদশা শীতের মধ্যে বসে না থেকে তাকে বাসায় চলে যেতে বলে। নিতু স্বাভাবিক নিয়মে বাসায় চলে যান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সদর থানার পুলিশ তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে টেনেহেঁচড়ে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে গিয়ে এসআই বাদশা, এসআই আজাহার ও কনস্টেবল নুরু (থানার কথিত ক্যাশিয়ার) অধ্যাপক নিতুকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ লাঞ্ছিত করে। ১২টার দিকে তার ‘সাহা রেস্টহাউস’-এর একটি রুম থেকে ১ জন মহিলা বোর্ডার, অন্য রুম থেকে ২ জন পুরুষ বোর্ডার ও হোটেলবয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়। এসআই বাদশা, এএসআই আজাহার তার রেস্টহাউসে অসামাজিক কার্যাকলাপের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ কোর্টে চালান দেওয়ার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে এসব ঝামেলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা (ঘুষ) দাবি করা হয়। নিতু এই টাকা দিতে অস্বীকার করেন। তাকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য ধৃত মহিলা ও বয়কে তার সামনে বেদম মারপিট করা হয়। এক পর্যায়ে ১৫ হাজার টাকা দিলে নিতুকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। অধ্যাপক নিতুর ছোট ভাই বাড়ি এসে তার বৌদির সোনার গহনা নিয়ে বন্ধক রেখে ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে থানায় দেওয়ার পর রাত সাড়ে ৩টার দিকে নিতুকে একটি সাদা কাগজে সই নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। হোটেলের বয়কে ছাড়ার জন্য আরো দেড় হাজার টাকা দাবি করা হয়। পরের দিন সকালে ধৃত অন্য বোর্ডারদের ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একটি সূত্র আরো জানায়, ঐ রাতে হোটেল থেকে ধরে আনা যশোর জেলার মঙ্গলগাতী গ্রামের মেয়েটিকে থানার হাজতখানার পাশের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে উল্লেখিত দুই দারোগা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অধ্যাপক নিতু সাহা ১০ জানুয়ারি ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এসে জাতীয় দৈনিকের কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে সমস্ত ঘটনা জানান। তিনি আরো জানান, এই দারোগারা ইতিপূর্বে তাকে প্রস্তাব দিয়েছিল যে হোটেলে কোনো মহিলা থাকলে তাদের গোপনে জানাতে। তারা তাদের ধরে টাকা আদায় করে ভাগ দেবে। নিতু সাহা তাতে রাজি না হওয়ায় দারোগারা এভাবে তাকে হেনস্তা করেছে। ঘটনাটি জানার পর সাংবাদিকরা ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মোঃ মঞ্জুর কাদের খানকে জানান। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। এর কিছুক্ষণ পর এসআই বাদশা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে প্রেসক্লাবে আসেন। অধ্যাপক নিতু সাহার মুখোমুখি করা হলে এসআই বাদশা ধর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করলেও অন্য সকল ঘটনা স্বীকার করেন। তবে এই কাজে এএসআই আজাহার ও কনস্টেবল নুরু অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে বলে জানান। সাহা রেস্টহাউস থেকে ধৃত মহিলাসহ অন্যদের কোনো প্রকার অসামাজিক কাজ করা অবস্থায় ধরা হয়েছিল কিনা জানতে চাওয়া হলে বাদশা জানান, ‘না মহিলা একটি কক্ষে একাই ছিল।’ তাহলে তাদের কেন গ্রেপ্তারসহ এই বেআইনি কাজ করা হলো⎯ এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর এসআই বাদশা দিতে পারেনি। এরপর বাদশা নিতু সাহার কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে চান। তবে টাকা অন্য অফিসারদের ভাগ দিয়েছেন বিধায় পুরো টাকা তার কাছে না থাকায় এক দিন সময় চান। এই ঘটনার পর ঝিনাইদহ থানার কয়েকজন অফিসার সাংবাদিক নেতৃত্ববৃন্দের বাসায় বাসায় ধর্না দিয়ে ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের দালালরাও তাদের সহযোগিতায় নেমে পড়ে। কোনো ফল না হওয়ায় ১২ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে এসআই বাদশা ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে নিতু সাহার হাতে সাড়ে ৮ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকা সত্বর দেওয়ার ওয়াদা করেন। এদিকে পুলিশ সুপার এই ঘটনা তদন্তে এএসপির নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তবে এই রিপোর্ট পাঠানোর মুহূর্ত পর্যন্ত তদন্ত কাজের কোনো অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি।

ভোরের কাগজ, ১৫ জানুয়ারি ২০০২

Exit mobile version