সন্ত্রাসীদের অব্যাহত হুমকির কারণে গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কল্পনা রানীর পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘ সাড়ে ৭ মাসেও নিজেদের বসতবাড়িতে ফিরতে পারেনি। ‘সংবাদ’সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ইতোমধ্যেই গৃহছাড়া ওই পরিবারের দূরাবস্থা সম্পর্কে খবর বেরিয়েছে। কল্পনা রানী বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যদের দুর্বিসহ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে টাঙ্গাইল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে স্বামী-সন্তানসহ নিজেদের বসতবাড়িতে যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন; কিন্তু এতে এখনও কাজ হয়নি। ফলে এই নিরীহ পরিবারের সদস্যদের ঘরবাড়ি ছেড়ে এখনও পালিয়ে ফিরতে হচ্ছে। গোপালপুরের দড়িসয়া গ্রামে গত রোববার সরজমিন পরিদর্শনে গেলে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝাওয়াকাইন বাজার এবং দড়িসয়া গ্রামের অধিবাসীরা ‘সংবাদ’ প্রতিনিধিকে জানান, বিএনপি-জামাত জোটের সমর্থক রশিদ-কালাম-জহিরুল এবং তাদের বাহাসভুক্তরা কল্পনা রানীর স্বামী হারান চন্দ্র দেবের সম্পত্তির লোভে আগে থেকেই এই পরিবারটির ওপর নির্যাতন করে আসছে। গত ১৬-৯-০১ রাতে রশিদ-কালাম গং মারাত্মক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কল্পনা রানীর বাড়িতে হামলা চালায়। ঘরের দরোজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তারা কল্পনাকে মারপিট করে তার একটি হাত ভেঙ্গে ফেলে এবং নগদ টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে। কল্পনা রানী এ ব্যাপারে গোপালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন আছে। এই মামলা দায়ের করায় আসামিরা ক্ষেপে যায়। গত ১ অক্টোবর রাতে ওই আসামিরা মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে পুনরায় কল্পনার বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালায়। এই রাতে স্বামী-সন্তানসহ পালিয়ে কল্পনা রানী আত্মরক্ষা করেন। এরপর থেকেই কল্পনার পরিবারের সদস্যরা জীবনের নিরাপত্তার অভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তর মতো এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পালিয়েও রেহাই পায়নি এই পরিবারের সদস্যরা। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করতে থাকে। গত ৫ অক্টোবর সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ও হারুন কল্পনার স্বামী হারান দেবের কাছ থেকে একটি সাদা নন জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্পে জোর করে সই নেয়। এছাড়া রশিদ-কালাম-জহিরুল-হাকিমগং নানাভাবে কল্পনা ও তার স্বামীকে হুমকি দেয়া অব্যাহত রাখে। এই হুমকির ব্যাপারে কল্পনা ৬-২-০২ গোপালপুর থানায় ১৫৮ নম্বরের একটি জিডি করেন; কিন্তু পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার বা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব থাকে। এলাকাবাসী জানান, সন্ত্রাসীদের কারণে ইউপি সদস্য কল্পনা রানীর পরিবার গৃহছাড়া মর্মে ‘সংবাদ’, ‘জনকণ্ঠ’, ‘প্রথম আলো’ ও ‘আজকের কাগজ’সহ বিভিন্ন পত্রিকায় কয়েকটি রিপোর্ট বের হয়েছে। কল্পনা রানী তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা বিধান এবং তার পরিবারের সদস্যরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বসতবাড়িতে বসবাস করতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোপূর্বে টাঙ্গাইল জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান টাঙ্গাইল-২ আসনের এমপি ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক পৃথক আবেদন করেছেন; কিন্তু এরপরও তারা তাদের বাড়ি ফিরতে পারেনি। গত রোববার বিকেলে মধুপুর উপজেলা সদরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া কল্পনা রানীর স্বামী হারান দেব ‘সংবাদ’ প্রতিনিধিকে জানান, সাড়ে ৭ মাসেরও বেশি দিন যাবৎ কি কষ্টে যে এখানে-সেখানে ঠিকানাহীন ঘুরছি। আমার কলেজছাত্রী মেয়ের এবং স্কুলছাত্র ছেলের পড়ালেখা বন্ধ। তারা এক আত্মীয়ের বাড়ি, আমি অন্য আত্মীয়ের বাড়ি। এমনি করে দিন আর কাটতে চায় না। তিনি বলেন, আমি সরকারের কাছে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা চাই। নিজেদের বাড়ি ফিরতে চাই। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করি।
সংবাদ, ২২ মে ২০০২