Site icon অবিশ্বাস

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারে সম্পাদক পরিষদের নিন্দা

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সরকারের অব্যবস্থাপনার সমালোচনা করায় সম্প্রতি সম্পাদকসহ সাংবাদিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

 

এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবাধ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিনষ্ট এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর পুলিশের ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর সম্পাদকদের নিয়ে গঠিত এই সংগঠনটি।

সম্পাদক পরিষদের সভাপতি দ্য ডেইলি স্টার এর সম্পাদক মাহফুজ আনাম এবং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ প্রতিদিন এর সম্পাদক নাঈম নিজাম বিবৃতিতে বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, যাদের মধ্যে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা এমন এক ভীতির পরিবেশ তৈরি করেছে, যেখানে স্বাভাবিক সাংবাদিকতার কাজও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

‘সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের ওপর এই আক্রমণ তখনই হচ্ছে, যখন কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় লড়াই চলছে। অথচ এ সময় বাংলাদেশে মিথ্যা সংবাদ ও ভীতি ছড়ানো ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় নির্ভরযোগ্য ও স্বাধীন গণমাধ্যম সবচেয়ে বেশি জরুরি।’

বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের গণমাধ্যম জনগণকে তথ্য জানানোর পাশাপাশি সাফল্য ও প্রত্যাশার সংবাদ পরিবেশন করছে, মহামারি মোকাবিলায় অপ্রতুল পদক্ষেপের কথা তুলে ধরছে, এবং পুনর্গঠনের পথ খুঁজে পেতে আলোচনার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই সময় গণমাধ্যমের ওপর আঘাত আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকেই বিপন্ন করবে।’

‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ করছি যে অন্য আইনের তুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। এর কারণ হলো এই আইনের আওতায় পুলিশ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করতে পারে এবং এই আইনের বেশির ভাগ ধারাই (২০টির মধ্যে ১৪টি) অজামিনযোগ্য। ফলে এই আইনে গ্রেপ্তার হওয়ার পর একজন ব্যক্তিকে কারাগারেই রয়ে যেতে হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া বেশির ভাগ মামলায় করা অভিযোগগুলোর মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের সমালোচনা, গুজব রটানো, বিক্ষোভে সমর্থন, মানহানিকর মন্তব্য, ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা, ভুয়া সংবাদ পরিবেশন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব কারণের সবগুলোরই সংজ্ঞা অস্পষ্ট’, বিবৃতিতে বলেন তারা।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা গোষ্ঠীর হাতিয়ার হয়ে উঠেছে, যারা গণমাধ্যমবিরোধী ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী এই আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো সাংবাদিকদের হয়রানি করা ও ভয়ভীতি দেখানো এবং দুর্নীতি ও জনগণের জন্য, বিশেষ করে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ সরকারি তহবিলের অপব্যবহারের খবর প্রকাশে বাধা দেওয়া।’

শুরু থেকেই এই আইনের বিরোধিতার কারণের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘এই আইন মুক্ত গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী। সে সময় আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু সাইবার অপরাধ দমনে প্রণয়ন করা হয়েছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে এই আইন কখনো ব্যবহার হবে না। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাইবার অপরাধীদের চেয়ে সাংবাদিক, শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবীরাই বেশি গ্রেপ্তার হয়েছেন, বিশেষ করে বিগত ছয় মাসে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে। বিগত আড়াই বছরের অভিজ্ঞতায় আমাদের কাছে আরও স্পষ্ট হয়েছে যে মুক্তমত ও মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল করতে হবে।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার সব সাংবাদিকের অবিলম্বে মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার এই মুহূর্তে বন্ধের দাবি জানাচ্ছি এবং আমরা জাতীয় সংসদের প্রতি এই স্বাধীনতা পরিপন্থী আইন অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’

Exit mobile version