Site icon অবিশ্বাস

তারামিয়ার ওপর পুলিশের পাওয়ার প্র্যাকটিস

ডিসেম্বর ২০১৮, জাতীয় নির্বাচনের জন্য দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আর এরই মধ্যে চলছে নাশকতার জন্য সন্ত্রাসীদের গোপন তৎপরতা। তেমনই এক তৎপরতার খবর পেয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে আমাদের করিৎকর্মা পুলিশ বাহিনী গ্রেফতার করে এক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীকে। সেই সন্ত্রাসীর(!) নাম তারামিয়া।

ছবি কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো

আসুন তারামিয়া সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নিই। তারামিয়ার ডান হাত অস্বাভাবিক চিকন, কোনো চেতনা নেই। নাড়াতেই কষ্ট হয়। কিছু ধরতে বা কাজ করতে পারেন না ডান হাত দিয়ে। এমনকি ডান হাতে খেতেও পারেন না। এটি তার জন্মগত সমস্যা। বাম হাত তুলনামূলকভাবে লম্বা এবং বাঁকানো। খুব কষ্ট করে বাম হাত দিয়ে খেতে হয়। তারামিয়া পাঁচ সদস্যের সংসার চালান ভিক্ষা করে। সুনামগঞ্জের অধিবাসী এই অসহায় মানুষটির ওপর চাপাতি, হকিস্টিক ও লোহার রড হাতে নিয়ে আক্রমণের অভিযোগ এনে মামলা করেছে বাংলাদেশের জাতীয় দুঃখ পুলিশ বাহিনী।

বিশেষ ক্ষমতা আইনের ওই মামলায় বলা হয়, গত ২৮ ডিসেম্বর পুলিশ খবর পায় জামালগঞ্জ থানার ভীমখালী ইউনিয়নের মল্লিকপুর বাজারের পঞ্চগ্রাম মাদরাসা ভোটকেন্দ্রে আসামিরা নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। পুলিশ গিয়ে দেখতে পায়, আসামিরা রামদা, হকিস্টিক, লোহার রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের নামে মিছিল করে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। পরে আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরদিন পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করে।

২৩ জানুয়ারি বুধবার বেলা আড়াইটায় তারামিয়া সহ অন্যদের জামিন আবেদন শুনানির জন্য ডাকা হয়। তাদের আইনজীবী মোহাম্মদ আবিদুল হক ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। পত্রিকাটি হাতে নিয়ে আদালত বলেন, এর মাধ্যমে কী বোঝাতে চাইছেন? তখন আবিদুল হক বলেন, জামিন আবেদনকারীকে (তারামিয়া) নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তার এক হাত সম্পূর্ণ অকেজো, তার পক্ষে কি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করা সম্ভব? এই অভিযোগ যে সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক, তার প্রমাণ এই মামলা। পরে আদালত আদেশ দেন।

জামিন পাওয়ার পর তারামিয়া বলেন, ‘চলতে-ফিরতেই আমার সমস্যা অয়, এক হাত অবশ, আরেক হাত দিয়া তেমন কোনো কাম করতাম পারি না। আমি পুলিশরে কি-লা রামদা দিয়া মারমু। ইতা সব মিছা।’

তারামিয়া সহজ সরল সোজা বক্তব্য দিলেও শেষ হয়নি পুলিশ বাহিনীর অমানবিক তামাশা। জামালগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাসেম বলেন, ‘তারামিয়া ওই মামলার এজাহার নামীয় আসামি। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। আমরা জেনে-বুঝেই তাকে আসামি করেছি। তার এক হাতে সমস্যা থাকলেও অন্য হাত দিয়ে সব কাজ করতে পারেন।’

পাঠক, আপনারা ইতিমধ্যে তারামিয়ার ছবি দেখেছেন। পুলিশ যে হাতের কথা উল্লেখ করেছে তারামিয়ার সেই হাতকে একজন নিরস্ত্র মানুষও ভয় পাবে না। কিন্তু অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি বাহিনীর কাছ থেকে আমরা জানতে পারলাম আমাদের রাষ্ট্র তারামিয়ার অকেজো হাতের আক্রমণের ভয়ে তটস্থ থাকে। এবং সুযোগ পেলেই তারামিয়ার মত অসহায় মানুষদের উপর রাষ্ট্র তার ক্ষমতা চর্চা করে। আর পেশীবহুল অপরাধীদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার জন্য মুখিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে পুলিশের দারোগা পর্যন্ত সবাই পেশী পছন্দ করে, পেশী ভালোবাসে। রাষ্ট্র যেন পেশীবহুল দানবের সামনে নতজানু পূজারী।

Exit mobile version