Site icon অবিশ্বাস

নরসিংদীর রায়পুরায় কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ শেষে হত্যা

মামলার তদন্তে পুলিশকে সহযোগিতা করায় এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ শেষে মেরে ফেলেছে সন্ত্রাসীরা। ভয়াবহ এই ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার পল্লীতে।

 

২৮ জুন সোমবার আফসানা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। উপজেলার কাচারিকান্দি এলাকার নান্নু মিয়ার মেয়ে আফসানা স্থানীয় পাড়াতলী কলিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

জানা গেছে, গত রবিবার রাতে পাড়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহ আলম ও তাঁর সমর্থকদের ৩০টি ঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে স্থানীয় প্রয়াত আব্দুল আজিজ ফজলু মেম্বারের ছেলে ছোট শাহ আলম ও তাঁর সমর্থকরা। হামলাকারী সন্ত্রাসীরা এ সময় স্কুলছাত্রী আফসানাকে জবরদস্তি তুলে নিয়ে যায়। এরপর কাচারিকান্দির চরে এনে ধর্ষণ ও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয় বলে দাবি নিহতের পরিবারের। গতকাল সকালে পুলিশ আফসানার লাশ কাচারিকান্দির চর থেকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

আফসানার বাবা নান্নু মিয়া গতকাল কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘শনিবার পুলিশ আইছিল মামলার তদন্ত করতে। আমার আফসানা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরগুলা পুলিশকে ঘুরাইয়া দেখাইছে। আর এই রাগে ছোট শাহ আলমের লোকেরা আমার ঘর ও দোকানে আগুন দেয়। পরে মাইয়ারে মুখ চাইপা তুইলা নিয়া যায়। তাগো হাতে-পায়ে ধরছি মাইয়ারে ছাইড়া দিতো। ওরা কোনো কথাই শুনল না। সারা রাইত খুঁজছি। পাই নাই। সকালে খবর আইছে যে কাচারিকান্দির চরে লাশ। মাইয়ারে ওরা ধর্ষণ কইরা পরে মাথায় গুলি কইরা মারছে। আমি এই পাষণ্ড জানোয়ারদের বিচার চাই।’

আফসানার মা আবিদা খাতুনও কান্নাজড়িত কণ্ঠে ধর্ষক-খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ১৭ মে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ইয়াছিন মিয়া (১০) নামের এক শিশু ও শহীদ মিয়া নামের আরেকজন নিহত হয়। আহত হয় উভয় পক্ষে প্রায় ৫০ জন। পাশাপাশি সংঘর্ষে একাধিক বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়।

নিহত ওই দুজন ছোট শাহ আলমের সমর্থক পরিবারের সদস্য। এই হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়। মামলায় পাড়াতলী ইউপি সদস্য শাহ আলমসহ তাঁর দলের ৭১ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ একটি মামলার প্রধান আসামি রূপ মিয়া নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে সে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে।

এদিকে মামলার পরপরই গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছাড়ে ইউপি সদস্য শাহ আলম ও তাঁর গ্রুপের পুরুষ সদস্যরা। আর এই ফাঁকে পুরুষশূন্য বাড়িঘরে থেমে থেমে লুট ও ভাঙচুর চালায় প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় গত শনিবার পুলিশ তদন্তে এলে স্কুলছাত্রী আফসানা তাদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো ঘুরিয়ে দেখায়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে গত রবিবার রাতে ছোট শাহ আলম ও তাঁর সমর্থকরা আরো ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপাশি আফসানাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন গতকাল সকালে আফসানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাচারিকান্দি চরে শুকনো একটি ড্রেনে নীল রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা আফসানার নিথর দেহ পড়ে আছে। পাশে আহাজারি করছেন মা আবিদা খাতুন। সেখানে কথা হয় আরেক ভুক্তভোগী মিনারা বেগমের সঙ্গে। তিনি নিজের পুড়িয়ে দেওয়া বসতঘর দেখিয়ে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের ভয়ে স্বামী বাড়িছাড়া। বড় ছেলে থাকে বিদেশে। ছোট মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে থাকি। কিছুদিন আগে বসতঘরটি রক্ষায় ছোট শাহ আলমকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদাও দিয়েছি। তার পরও গত রাতে (রবিবার) তারা আমার ঘরটি পুড়িয়ে দিয়েছে। সোনার গয়না ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। এখন মেয়েকে নিয়ে কোথায় যামু বুঝতে পারতেছি না।’

রায়পুরা থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কেউ অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেনি। অগ্নিসংযোগ ও হত্যার ঘটনায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়েছে। পাশাপাশি একটি দেশীয় বন্দুকসহ বেশ কিছু টেঁটা উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

কালের কণ্ঠ

Exit mobile version