Site icon অবিশ্বাস

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় মাদ্রাসাছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে ইমাম গ্রেফতার

 এলাকা থেকে এক মসজিদের ইমামকে আট বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭ আগস্ট  বুধবার গ্রেফতার করে র‍্যাব-১১। শিশুটিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অপহরণের চেষ্টা ও পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ইমামের সহযোগী আরো পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়

৭ আগস্ট বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীতে অবস্থিত র‍্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ের মিডিয়া কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

র‍্যাব জানায়, ৬ আগস্ট মঙ্গলবার রাতে বোরকা পরিহিত অবস্থায় এক ব্যক্তি র‍্যাব-১১ অফিসে এসে এই মর্মে একটি অভিযোগ দেন যে, তার মেয়ে বর্তমানে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতাল, নারায়ণগঞ্জে চিকিত্সাধীন অবস্থায় রয়েছে এবং এক মসজিদের ইমাম তাকে ধর্ষণ করেছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের পর ইমামের অনুসারীরা তার মেয়ে ও তাকে মেরে ফেলার জন্য হাসপাতালে গিয়ে বারবার তাদের খুঁজছে। ঘটনা শোনার পর তাত্ক্ষণিকভাবে র্যাব-১১ এর একটি অভিযানিক দল ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে যায়। ভিকটিম ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়ে হাসপাতালে তাদের নিরাপত্তার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর  ৭ আগস্ট বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন উত্তর চাষাঢ়ার চানমারী এলাকা থেকে ইমাম মো. ফজলুর রহমানকে (৪৫) গ্রেফতার করে র‍্যাব। গ্রেফতারকৃত ফজলুর রহমান নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানার সরাপড়া গ্রামের মৃৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।

র‍্যাব জানায়, ইমাম ফজলুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার শিশুটি মাদ্রাসার ২য় শ্রেণির ছাত্রী। শিশুটি রাতের বেলায় বিভিন্ন রকম দুঃস্বপ্ন দেখে কান্নাকাটি করত। তার বাবা জানতে পারেন যে, মসজিদের ইমাম মো. ফজলুর রহমান বিভিন্ন চিকিত্সায় ঝাড়ফুঁক করে ও পানিপড়া দেয়। এরপর ভিকটিমের বাবা তার মেয়েকে ২ থেকে ৩ বার ফজলুর রহমানের কাছে ঝাড়ফুঁক করিয়ে নেন। কিন্তু এতে কোনো উপকার না হওয়ায় ফজলুর রহমান ভিকটিমের বাসায় গিয়ে ‘বাড়ি বন্দি’ নামক চিকিত্সা করে আসে।  ৪ আগস্ট রবিবার ভিকটিমের বাবা ইমাম ফজলুর রহমানকে ফোন দিয়ে মেয়ের চিকিত্সার ব্যাপারে তার কাছে যেতে চাইলে সে পরদিন ৫ আগস্ট সোমবার ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে যেতে বলে। সে কথা অনুযায়ী পরদিন সকালে ভিকটিমের বাবা তার মেয়েকে নিয়ে মসজিদে চলে যান। ফজরের নামাজের পর ইমাম ওই মাদ্রাসা ছাত্রী ও তার বাবাকে মসজিদের তিনতলায় তার বেডরুমে নিয়ে যায়। এরপর হালকা ঝাড়ফুঁক করে পরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাবাকে ভোর ৫টার দিকে এক প্যাকেট আগরবাতি ও একটি মোমবাতি আনার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দেয়। ঐ সময় দোকানপাট খোলা না থাকায় শিশুটির বাবা কিছু কিনতে পারছিলেন না। এরপর সময়ক্ষেপণ করার জন্য ইমাম ফজলুর রহমান শিশুটির বাবাকে ফোন করে একটি পান আনতে বলে ও মসজিদের মোয়াজ্জিনকে ফোন করে নিচের গেটে তালা লাগাতে বলে। ভিকটিমের বাবা ফিরে আসতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় গড়িয়ে যায়। এরই মাঝে শিশুটির দুই হাত পেছনে বেঁধে ও মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে পাষণ্ড ইমাম নির্মমভাবে তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায় এবং প্রমাণ মুছে ফেলার জন্য মসজিদের ছাদে নিয়ে শিশুটিকে পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে দেয়। এরপর শিশুটির গলায় ছুরি ধরে ঘটনাটি তার বাবা-মাকে না বলতে হুমকি দেয় এবং বললে ‘জবাই করে ফেলবে’ বলে হুঁশিয়ার করে। শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেয়। শিশুটি বাসায় গিয়ে তার বাবা-মাকে সবকিছু খুলে বলে। ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে বাবা-মা শিশুটিকে নিয়ে মসজিদে গিয়ে বিচার দেন। তখন মসজিদ কমিটির কিছু লোক ও ইমামের কিছু ভক্ত মিলে সেখানে শিশুটি ও তার বাবা-মাকে মারাত্মকভাবে হেনস্তা করে। ধর্ষক ফজলুর রহমান তার অনুসারীদের দিয়ে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করে যে, শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা-মা যেন থানা বা হাসপাতালে যেতে না পারেন। এরপর শিশুটির অবস্থা আরো খারাপ হলে তার বাবা-মা তাকে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে বহু কষ্টে গোপনে ভর্তি করেন। জানা গেছে, ধর্ষক ফজলুর রহমান ও তার অনুসারীরা শিশুটিকে অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যে কয়েক দফা চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, শিশুটিকে হাসপাতালে লুকিয়ে রেখে তার বাবা-মাকে দীর্ঘসময় ধরে হাসপাতালের টয়লেট ও বেডের নিচে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। একপর্যায়ে শিশুটির বাবা হাসপাতালের নার্সের বোরকা পরে র্যাব অফিসে গিয়ে অভিযোগ দেন। শিশুটিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে অপহরণের চেষ্টা এবং এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অপরাধে ধর্ষকের অনুসারী মো. রমজান আলী, মো. গিয়াস উদ্দিন, হাবিব এ এলাহী ওরফে হবি, মো. মোতাহার হোসেন ও মো. শরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা হয়েছে।

ইত্তেফাক

Exit mobile version