বেশ কিছু দিন ধরে নাসিরনগরে হিজবুত তাওহীদের সঙ্গে স্থানীয় ওলামা পরিষদের দ্বন্দ্ব চলছিল। দ্বন্দ্বের মূল কারণ হিজবুত তাওহীদের মতাদর্শের সঙ্গে ইসলামের আদর্শগত পার্থক্য রয়েছে বলে দাবি ওলামা পরিষদ নেতাদের। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই তর্কবিতর্ক হতো। এ দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সর্বশেষ ২২ মার্চ সোমবার এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য সংঘর্ষে রূপ নেয়।
এদিন রাত ৮টায় স্থানীয় কলেজ মোড়ে হিজবুত তাওহীদের সমর্থকদের ওপর ওলামা পরিষদ সমর্থকরা চড়াও হলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এতে নারীসহ ১২ জন আহত হন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কিছু দিন আগে নাসিরনগরে হিজবুত তাওহীদের ৭১ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হতে থাকে সংগঠনটি। বিষয়টি নজরে এলে তাদের তৎপরতা বন্ধ করতে উপজেলা প্রশাসন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার। এ ঘটনার পরই হিজবুত তাওহীদের এক নেতা হাফেজ মো. ইদ্রিস মিয়া বাদী হয়ে নয়জনকে আসামি করে আদালতে মামলা করে দেন। নাসিরনগর থানা পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে এলাকায় শান্তি বজায় রেখে বসবাস করার শর্তে উভয়পক্ষকে সতর্ক করে দেয়।
এর কিছু দিন পর আবারও হিজবুত তাওহীদের সাংগঠনিক কাজ শুরু হলে নতুন করে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ওলামা পরিষদের সঙ্গে। রোববার রাতে সৌদি প্রবাসী ইদ্রিস মিয়ার ঘরে ১৫-২০ নারী সদস্যকে নিয়ে সংগঠনের বিষয়ে আলোচনা চলছিল। এ সময় স্থানীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, ইদ্রিস মিয়ার ঘরে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। তখন ওলামা পরিষদ সমর্থক স্থানীয় ওষুধ ব্যবসায়ী সোহাগ মিয়া ইদ্রিসের ঘরে গিয়ে বৈঠকের কারণ জানতে চান। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কর্তবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে হিজবুত তাওহীদের পক্ষের সাতজন এবং অপরপক্ষে চার জন আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাসিরনগর থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে ধর্মীয় মতাদর্শ দিয়ে বিরোধ চলছিল। রোববার হঠাৎ করেই দু’পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত আছে।
সংঘর্ষের পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিসুর রহমান, নাসিরনগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাফি উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা আশরাফী। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, যেহেতু ধর্মীয় বিষয় নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ, তাই আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
নাসিরনগর ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, হিজবুত তাওহীদ নাসিরনগরে দীর্ঘদিন ধরে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করছে। বাধা দেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেছে। রোববার রাতে স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর হিজবুত তাওহীদ পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। আমরা এর বিচার চাই।
হিজবুত তাওহীদ নেতা হাফেজ মো. রাকি উল্লাহ বলেন, আমরা হিজবুত তাওহীদ করি আদর্শিক কারণে। আমরা কারও কোনো ক্ষতি করছি না। অথচ আমাদের কাছে কোনো দোকানদার কিছু বিক্রি করতে চান না। সামাজিকভাবে আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। রোববার ওলামা পরিষদ সমর্থক স্থানীয় লোকজন পরিকল্পিতভাবে আমাদের বসতঘর ও দোকানে হামলা করে।