Site icon অবিশ্বাস

নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও নীরব সন্ত্রাসের আশঙ্কা আগৈলঝাড়ার সংখ্যালঘুরা বাড়ি ফিরতে চায়

আগৈলঝাড়া উপজেলার জলিরপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার বালা (৬৫), বাহাদুরপুর হাইস্কুলের শিক্ষক প্রভাত চন্দ্র হালদার (৬০), দোলারকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনীল চন্দ্র হালদার (৫৪), অধির সরকার (৪০), রাজিহার ইউপি চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র দাস, ইউপির মহিলা মেম্বার শেফালী সরকাররা বাড়িতে ফিরতে চায়। নিজ গৃহে ফিরে গিয়ে আবার তারা আগের মত শান্তিতে বসবাস করতে চায়। ফিরে যেতে চায় তাদের নিজ নিজ কাজে। কিন্তু প্রশাসনের উপর ভরসা না পাওয়ায় তারা ফিরতে পারছে না। এদের সবারই ভয় প্রশাসন তাদেরকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও আবার তাদের ওপর নেমে আসবে নীরব সন্ত্রাস। প্রকাশ্য না হলেও ভিতরে ভিতরে চলবে চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ অন্যান্য সন্ত্রাস। দুই সপ্তাহ আগে হাজার হাজার নির্যাতিত-নিপীড়িত, সন্ত্রাসের শিকার লোকজনের সঙ্গে এরাও নিজ বাড়িঘর, সহায়-সম্পত্তি ফেলে খালি হাতে জীবনের ভয়ে কোটালীপাড়ার রামশীলে আশ্রয় নিয়েছে আত্বীয়- স্বজনের বাড়িতে। কিন্তু তাঁরাও এতদিন আত্বীয়- স্বজনের বাড়িতে থাকতে থাকতে হাঁফিয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসের শিকার হয়ে কোটালীপাড়ায় চলে আসা এ লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায় নানা দুঃখের কথা। কতটা নির্যাতনের শিকার হলে মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে চলে আসে তার নানাবিধ কাহিনী তারা বলে। ধানডোবা গ্রামের হীরালাল তালুকদারের স্ত্রী শেফালী তালুকদার (৪০) পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন রামশীল বাজারে। তাঁর সঙ্গে রয়েছে কন্যা যুবতী দুলালী (২০) ও বিউটি (১৬)। এদেরকে হায়েনাদের হাত থেকে বাঁচাতেই তাঁরা চলে আসেন। স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে সঙ্গে নিয়ে জীবনভয়ে ভীত হয়ে চলে এসেছেন স্কুল শিক্ষক প্রভাত চন্দ্র হালদার (৬০)। ছোট দু’টি মেয়ে ও বুড়ো মাকে বাড়িতে ফেলে রেখে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছেন গৈলা ইউনিয়নের অশোক সেন, গ্রামের একটি বেসরকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী অধির সরকার (৪০)। তিনি জানান, বাড়ি ফিরতে তো মন চায়। বাড়িতে ফেলে আসা মেয়ে দু’টিরও কোন খোঁজ পাচ্ছি না। প্রশাসন আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছে, আপনারা বাড়ি ফিরছেন না কেন? প্রশ্ন করলে তিনি তার উত্তরে বলেন, “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়। ” প্রশাসনতো আর যার যার ঘরের কাছে বসে থাকতে পারবে না। এ জন্য দরকার স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দের সমঝোতা ও নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতির। তিনি বলেন, এখনও ভয়ভীতি দেখানো অব্যাহত রয়েছে ঐসব এলাকায়। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি হলে তবেই তাঁরা ফিরবেন। তিনি বলেন, আমরাও বাড়ি ফিরতে চাই।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৫ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version