দেশে নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনায় আক্রান্ত হিন্দু পরিবারগুলোর একটি বড়ো অংশ পাড়ি জমিয়েছে সীমান্ত সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই পরিবারগুলোর অধিকাংশই সাতপুরুষের ভিটে ছেড়ে ওপারে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশত্যাগ করেছে। ফলে, হঠাৎ করেই জমির দাম বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কোথাও কোথাও অল্প ক’দিনের ব্যবধানেই কাঠাপ্রতি জমির মূল্য বেড়েছে প্রায় দেড়গুণ। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জনপদগুলোয় নির্বাচনের পরপরই হামলা, নির্যাতন ও ভীতি প্রদর্শন শুরু হলে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা প্রথমদিকে আশপাশের অঞ্চলের আত্মীয়- স্বজনের বাসায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু আশ্রয় স্থলগুলোতেও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হলে শুরু হয় দেশত্যাগের পালা। রাতের আঁধারে পরিবার পরিজন নিয়ে যারা সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন তাদের একটা বড়ো অংশই আর দেশে ফিরতে আগ্রহী নন। জমি-জমা কিংবা বসতভিটে কিনে ওপারে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা শেষ সম্বল দিয়ে শুরু করেছেন বসত-ভিটের জমি কেনা। ফলে রাতারাতিই জমির দাম বেড়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। জানা গেছে মধ্যম গ্রাম, বিরাটি, বেহালা, অশোকনগর, নিউ বারাকপুর, সোধপুর, ব্যান্ডেল, হাবড়া ও গোবরডাঙ্গা শহরতলীর যেসব অঞ্চলে কাঠাপ্রতি জমির মূল্য ছিল ৪০ হাজার টাকা তা এখন প্রতি কাঠা ৬০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। মূল শহরের যেসব অঞ্চলে কাঠা প্রতি মূল্য ছিলো এক লাখ টাকা⎯ ওইসব অঞ্চলে এখন প্রতি কাঠা জমি বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে।
অন্যদিকে কোটালীপাড়াসহ গোপালগঞ্জের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নির্বাচনের পরবর্তী সহিংসতায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ জেলায় আসা আশ্রয়প্রার্থীদের একটি অংশ ইতিমধ্যেই ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। যারা এখনো যাননি তাদেরও একটি অংশ দেশত্যাগে বদ্ধপরিকর।
আজকের কাগজ, ১৪ অক্টোবর ২০০১