Site icon অবিশ্বাস

পাবনার সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু জেলে পরিবারের ওপর হামলা-ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনা

পাবনার সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘু হিন্দু জেলে পরিবারের ওপর হামলা-ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার (২৮ মার্চ) রাতে ভুক্তভোগী বিমল রাজবংশী বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানা মামলাটি দায়ের করেছেন। 

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলার করমজা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন বড়গ্রাম হিন্দুপাড়ার জেলে সম্প্রদায়ের নেতা বিমল রাজবংশী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী মুন্সী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন।

বিমল রাজবংশী বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানালে গত ২৫ মার্চ রাতে চেয়ারম্যান হিন্দু পাড়া পরিদর্শনে আসেন। এ সময় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী মুন্সীর নেতৃত্বে শতাধিক সন্ত্রাসী চেয়ারম্যানের সামনেই হিন্দু পাড়ায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারপিট শুরু করে। এতে বিমল রাজবংশীসহ তার পরিবারের সদস্যরা আহত হন। এ ঘটনা থানায় জানালে হিন্দু পাড়ার লোকজনকে দেশছাড়া করার হুমকি দিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা।

বিমল রাজবংশী বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চাওয়ায় মুন্সী মেম্বর আমাকে বলেন, হিন্দু লোককে নেতা বানানো হবে না। তুই প্রার্থিতা প্রত্যাহার কর। এতে আমাদের সংখ্যালঘুরা অপমান বোধ করে এবং আমাকে যে কোনো মূল্যে প্রার্থী হতে বলায় আমি দলীয় নেতা–কর্মীদের মাঝে সমর্থন চাইতে থাকি।

তিনি বলেন, বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন বাগচীকে জানালে তিনি বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের পাড়ায় পরিদর্শনে আসেন। এ সময় হঠাৎ করেই মুন্সী মেম্বর ও তার ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাঠি, ফালা, হাঁসুয়া ও ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। তারা আমাকে মারপিট শুরু করে। বাধা দেওয়ায় আমার আত্মীয় জিতেন হালদার, রনজু হালদার, আকাশ হালদার, মন্টু হালদারসহ উপস্থিত সবাইকে মারপিট শুরু করে এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। এ সময় চেয়ারম্যান হোসেন আলী বাগচী হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করে তারা।

বিমল রাজবংশী আরও বলেন, মুন্সী মেম্বর হামলার ঘটনা থানায় জানালে হিন্দুপাড়া জ্বালিয়ে দিয়ে সবাইকে দেশছাড়া করার হুমকি দেন। ভয়ে আমি বিষয়টি থানায় জানানোর সাহস পাইনি। এতে হিন্দুপাড়ায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ খবর জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের কাছে পৌঁছালে তাদের সহযোগিতায় রোববার (২৮ মার্চ) মুন্সী মেম্বরসহ ২৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বিমল রাজবংশী। ঘটনার পর থেকে মুন্সী মেম্বর পলাতক রয়েছেন।

হামলার ঘটনা নিশ্চিত করে করমজা ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন বাগচী বলেন, হিন্দু পরিবারের ওপর হামলার সময় মুন্সী মেম্বরকে আমি বাধা দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেনি। হিন্দুদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, আমরা তাদের পাশে আছি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে অভিযুক্ত মুন্সী মেম্বরসহ পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এদিকে হিন্দু পাড়ায় হামলার ঘটনায় গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সাঁথিয়া উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি সুশীল কুমার দাস। তিনি বলেন, বড়গ্রাম হিন্দু পাড়ায় অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে হিন্দু জেলেদের বাস। তাদের রাজনীতির অধিকার রয়েছে। হিন্দুরা কেন নেতা হবে এমন মনোভাব পোষণ ও হামলা মারপিটের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। আমরা ঘটনার বিচার দাবি করছি।

সময় নিউজ টিভি

Exit mobile version