পাবনায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর ছেলে নাসিফ শামস রনির বিরুদ্ধে সরকারি ও দরিদ্র চাষিদের জমি দখল ও তাদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রামবাসীর পক্ষে ‘মনিরুজ্জামান’ ও ‘মানিক’ নামে দুজনের স্বাক্ষরে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে পাবনার ডিসির কাছে।
তবে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) আসনের সংসদ সদস্য টুকুর ছেলে রনি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, নাসিফ শামস রনি বেড়া উপজেলার পায়না এলাকায় যমুনা নদীর তীরে ২০১২ সালে ৬০ বিঘা জমি কেনেন। এরপর নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের জমি ‘দখলে’ নিয়ে নেন। এরপর ক্রমান্বয়ে আশপাশের দরিদ্র চাষিদের দখলে থাকা ব্যক্তিগত ও খাস খতিয়ানভুক্ত ৯০ বিঘা জমি ‘দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা’ করতে থাকেন।
অভিযোগে বলা হয়, রনির ‘হুমকিতে’ গ্রামবাসীরা জমির দখল না ছাড়ায় গত শুক্রবার সকালে ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ সঙ্গে নিয়ে চাষিদের রোপণ করা বোরো ধান নষ্ট করে কাঁটাতারে জমি ঘিরে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ সময় চাষিরা বাধা দিলে ‘সন্ত্রাসীরা’ তাদের মারপিট শুরু করে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী বিক্ষোভ শুরু করলে উপস্থিত পুলিশ উল্টো ‘এমপি পুত্রের পক্ষ নিয়ে’ বিক্ষোভকারীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
কয়েক ঘণ্টা পর তাদের কয়েকজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ঘটনার পর থেকে পুলিশ তাদের ‘হয়রানি করছে’ বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেড়া মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম বলেন, নাসিফ শামস রনি বেড়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তার প্রকল্পে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীর কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ করা হয়েছে সেখানে।
“ওই মামলায় শুক্রবার কয়েকজনকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরে তাদের মধ্যে পায়না গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে তুহিন ও আহমেদ মোমিন বেপারির ছেলে মহররম আলীকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”
বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, শুক্রবার পায়না গ্রামে ‘বিশৃঙ্খলার’ খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কারো পক্ষ হয়ে কাজ করার অভিযোগ ‘সত্য নয়’।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মানিক ব্যাপারী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াবদা বাঁধে বানভাসি ও হতদরিদ্র কিছু মানুষ ছাপড়া ঘর তুলে বসবাস করে। শুক্রবার তাদের উচ্ছেদ করার খবর পেয়ে তিনি সেখানে যান।
“এই সময় এমপিপুত্রের লোকজন এক্সক্যাভেটর দিয়ে চাষিদের রোপণ করা ধান মাটিচাপা দিতে শুরু করলে আমি দলীয় পরিচয় দিয়ে নাসিফ শামস রনিকে ফসল নষ্ট না করতে অনুরোধ জানাই; তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে আমাকেও গালাগাল দেন।”
বেড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মান্নান মানু বলেন, নাসিফ শামস রনি ৬০ বিঘা জমি কিনে সেখানে ‘সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্ট’ এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে ‘আশপাশের সব জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা’ করছেন।
“সাধারণ মানুষের তো বটেই, আমার ব্যক্তিগত জমির ধানও তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন।”
তবে গ্রামবাসীর অভিযোগ ‘অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্ প্রণোদিত’ বলে দাবি করছেন নাসিফ শামস রনি।
তিনি বলেন, পায়না এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও ব্যক্তিগত ব্যবসার জন্য তিনি জমি কিনেছেন। সেখানে উন্নয়ন কাজ চলছে। কাউকে উচ্ছেদ বা মারপিটের ঘটনা ‘কখনোই ঘটেনি’।