Site icon অবিশ্বাস

পিকআপভ্যানে ‘দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার’ গার্মেন্টসকর্মী

ঢাকার আশুলিয়া থেকে জামালপুর যাওয়ার পথে এক পোশাককর্মী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

২৪ জানুয়ারি শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘীতে রাস্তার পাশে অচেতন ও গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এই নারীকে (২৬) উদ্ধার করা হয়। তকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের এই নারী আশুলিয়ায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তালাকপ্রাপ্তা এই নারীর ৮ বছরের এক ছেলে রয়েছে। গার্মেন্টেসের কাছে একটি মেসে থাকেন তিনি।

হাসপাতালে ওই নারী সাংবাদিকদের বলেন, গত বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৮টায় গার্মেন্টস ছুটি হলে তিনি জামালপুরে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। প্রথমে তিনি আশুলিয়া থেকে বাসে গাজীপুরের চানধরা এলাকায় নামেন। সেখান থেকে একটি পিকআপে ওঠেন।

“পিকআপটি চানধরা থেকে ছাড়ার পর কিছুদূর গিয়ে অন্যযাত্রীরা নেমে গেলে আমার পাশে থাকা যাত্রীটি একটি জুসের প্যাকেট কিনে ফের পিকআপে ওঠেন। তিনি আমাকে জুস খেতে দেন। প্রথমে না করলেও পরে খাওয়ার পরই অজ্ঞান হয়ে যাই।”

তার ভাষ্য, গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়ার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার কারণে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

মেয়েটির পরিবারের লোকজন বলেন, পরদিন শুক্রবার ভোরে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী এলাকায় রাস্তার পাশে তাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। তার গলায় গার্মেন্টেসের পরিচয়পত্রে থাকা মোবাইল নম্বরে ফোন করে গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের জানান।

পরে স্বজনরা গিয়ে তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যান। ২৫ জানুয়ারি শনিবার তাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর মাসহ অন্য নারী স্বজনদের ধারণা তাকে একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছে।

তার মা বলেন, তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। তবে গোপনাঙ্গে বেশ ক্ষত হয়েছে। তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা আছে।

নির্যতনকারীরা তার ব্যাগে থাকা একজোড়া রূপার নূপুর, একসেট জামা, নগদ প্রায় ৫ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন সেট নিয়ে ব্যাগটি তার পাশে ফেলে রেখে যায় বলে তিনি জানান।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক গাজী মো. রফিকুল হক বলেন, তাকে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হলেও এ সংক্রান্ত ডাক্তারি পরীক্ষা না করে আগেই কিছু বলা যাচ্ছে না। ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছেন কর্তব্যরত নার্সরা। তার ডাক্তারি পরীক্ষার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, বিছানায় শোয়া ওই নারী এখনও স্বাভাবিক হননি। তার জ্ঞান ফিরলেও বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকু নেই।

সর্বশেষ ঘটনাস্থল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী হওয়ায় মামলা দায়ের করা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই নারীর স্বজনরা। জামালপুর সদর থানা পুলিশ এ ঘটনা জানতে পেরে ২৬ জানুয়ারি রোববার দুপুরে হাপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারীর খোঁজখবর ও ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে ওই নারীর স্বজনদের ঘাটাইল থানায় মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছে।

জামালপুর সদর থানার ওসি মো. সালেমুজ্জামান বলেন, একজন এসআইকে হাসপাতালে পাঠিয়ে ওই নারীর পরিচয় ও ঘটনার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য মতে ঘটনাস্থল ঘাটাইলের সাগরদিঘী হওয়ায় ঘাটাইল থানাতেই মামলাটি দায়ের করার জন্য তার স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

জামালপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. বাছির উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল টাঙ্গাইল জেলার সাগরদিঘী। বিষয়টি তিনি টাঙ্গাইলের পুলিশ ও ঘাটাইল থানাকে অবহিত করেছেন।

জামালপুরের মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, দলবেঁধে ধর্ষণকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না হলে সামাজিকভাবে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলা হবে।

বিডি নিউজ

Exit mobile version