Site icon অবিশ্বাস

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন সাতক্ষীরার গ্রামে ১১০ বিঘা জমি দখলের চেষ্টা, বৃদ্ধা গৃহবন্দি

এক সংখ্যালঘু পরিবারের ১১০ বিঘা জমি আত্মসাৎ করার চেষ্টায় জমির মালিক দীপ্তি চ্যাটার্জিকে নিজ বাড়িতে প্রায় ২০ দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি তার বাড়ির দোতলা থেকে নিচে নামতে পারছেন না, এমনকি পূজা-অর্চনাও করতে পারছেন না। স্থানীয় কিছু যুবক জমির মালিকের পক্ষ নেওয়ায় একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে একের পর এক হয়রানি করছে। গত ৪ জুন এসব ঘটনা উল্লেখ করে জমির মালিক দীপ্তি চ্যাটার্জি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাননি। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিশখালি ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। গত রোববার বাগমারা গ্রামের ওই বাড়িতে গেলে স্থানীয় আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আলী শেখ ও নজরুলসহ অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগ সমর্থক মতিয়ার সরদার, আমজাদ, আব্দুস ছাত্তার, হাফিজুর রহমান, বিএনপি সমর্থক আবুল হাসেম ও সাবেক সাংসদ খলিলুর রহমানসহ আরো কয়েকজন মিলে দীপ্তি চ্যাটার্জির ১১০ বিঘা জমিসহ তার বিশাল বাড়িটি দখল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। স্থানীয় যুবক বাপ্পা, অরবিন্দু, অসিত, বাবুল গাজী, হাফিজুলসহ ১৫-২০ জন অবৈধভাবে বাড়ি ও জমি দখলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় মতিয়ার সরদার তাদের নামে ছিনতাই চাঁদাবাজি, চুরি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জমির মালিক দীপ্তি চ্যাটার্জি জানান, একমাত্র ভাই শিবু চ্যাটার্জি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় বাবা সুধীর কৃষ্ণ চ্যাটার্জির মৃত্যুর পর তিনি বাবার ১১০ বিঘা জমি ও এই বাড়ির উত্তরাধিকারী হন। কিন্তু দীর্ঘদিন ভাইয়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে থাকার সুযোগে খলিলুর রহমান ও আবুল হোসেন গত বছরের ৯ আগস্ট একটি ভুয়া পাওয়ার অব আ্যটর্নি সৃষ্টি করে জমি ও বাড়ি দখলের চেষ্টা চালায়। তিনি বলেন, সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ ১ নং আদালতে (৬/২০০২ নং) দেওয়ানি মামলা করেও কোনো লাভ হয়নি। খলিশখালি পুলিশ ক্যাম্পের দুই দারোগা রুহুল আমিন ও আমিনুর রহমান দখলকারীদের সহযোগিতা করছেন। দারোগা আমিনুর রহমান গত এক সপ্তাহে কয়েকবার এসে হুমকি দিয়ে গেছেন বাড়ি ছেড়ে চলে না গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। খলিশখালি পুলিশ ক্যাম্পে যোগাযোগ করা হলে দারোগা রুহুল আমিনকে পাওয়া যায়নি। তবে অপর দারোগা আমিনুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে কোনো সময় একটা অঘটন ঘটতে পারে এজন্য তালা থানার ওসি ওই বাড়ির দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে বলেছেন। দুদিন যাওয়ার পর একটি মহলের চাপে আর খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তালা থানার ওসি মতিয়ার রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ওই বাড়ি ও জমি নিয়ে যে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে যেকোনো সময় অঘটন ঘটতে পারে। অবৈধভাবে যেন কেউ দখল নিতে না পারে এজন্য খলিশখালি পুলিশ ক্যাম্পকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওয়ার অব আ্যটর্নির একাংশের মালিক সাবেক সাংসদ খলিলুর রহমানের ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বলেই দখলে যাব। তিনি বাগমারা গ্রামের কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এ ব্যাপারে গত মঙ্গলবার জমির মালিক দীপ্তি চ্যাটার্জির ভাইপো আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন।

প্রথম আলো, ১৪ জুন ২০০২

Exit mobile version