Site icon অবিশ্বাস

পূজামণ্ডপে হামলা প্রতিমা ভাংচুর বন্ধ হয়নি অনাড়ম্বর দুর্গোৎসব পালনের সিদ্ধান্ত

সাড়ম্বরে নয় বরং অনাড়ম্বরে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পূজা চলাকালীন সময় প্রতিবাদস্বরূপ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সাতক্ষীরা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শ্যামনগর উপজেলার হরিতলা পূজা মণ্ডপে সন্ত্রাসীরা প্রতিমা ভাংচুর করেছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ডা. গিরীন্দ্রনাথ মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে শ্যামনগরে পূজা চলাকালীন কালো ব্যানার টানানোসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি সংবলিত ব্যানার টানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ছাড়া গত বুধবার শ্যামনগর সদর থেকে স্কুলে যাওয়ার পথে জাওয়াখালী গ্রামের জনৈক অসীম কুমার গাইনের নবম শ্রেণীর কন্যাকে অপহরণ করার নিন্দা জানানোসহ অপহৃত কিশোরীকে অবিলম্বে উদ্ধারের জন্য শুক্রবার সকালে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিমা ভাংচুর করা পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, দুর্গোৎসবকে ঘিরে সংখ্যালঘুদের মধ্যে বিরাজ করছে ভয় আর আতঙ্ক। অন্যবছরের মতো জেলায় সরব প্রস্তুতি নেই। ভয়ে ভয়ে নীরবে সংখ্যালঘুরা তাদের সর্ববৃহৎ উৎসব উদযাপনের উদ্যেগ নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার পূজা উপলক্ষে বেচাকিনিও ভাল নয়। গ্রাম থেকে শহরে আসতে মানুষ ভয় পাচ্ছে। কুড়িগ্রাম থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে পাঙ্গাবাজার মন্দিরে শারদীয় দুর্গা উৎসবের তৈরি প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। এ ঘটনায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এক বিবৃতিতে দুর্গা প্রতিমা ভাংচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। শুক্রবার দুপুরে জনকন্ঠের এই প্রতিবেদক রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নে পাঙ্গাবাজারের মন্দির এলাকায় যেয়ে দেখেন, সেখানে পড়ে আছে দুর্গা প্রতিমার ভাঙ্গা মূর্তি। গ্রামবাসী জানায়, পাঙ্গা রাজবাড়ির পাশে যুগের পর যুগ হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশেই বাস করে আসছে। কখনই মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেনি। হয়নি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, এইবারই প্রথম এমন একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেছে তাদের মন্দিরে । পাঙ্গাবাজার পূজা কমিটির সভাপতি নরেশ চন্দ্র সরকার জানান, এমন ঘটনায় এ এলাকার লোকজন হতবিহ্বল, আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার তাদের মন্দির পরিদর্শন করেছেন এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করার আশ্বাস দেন। শরীয়তপুর থেকে সংবাদদাতা জানান, সারা দেশে অব্যাহত সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ, খুনসহ প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে শরীয়তপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সদর পালং হরিসভায় শুক্রবার এক জরুরী সভার আয়োজন করে। সভায় দেশব্যাপী অব্যাহত সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ, ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারকে আন্তরিক হবার আহবান জানানো হয়। সভায় আসন্ন দুর্গাপূজা অনাড়ম্বরভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীলিপ চন্দ্র ঘোষের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে জীতেন্দ্রনাথ রায়, শ্যামসুন্দর দেবনাথ, শংকর প্রসাদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। এদিকে শুক্রবার ভেদরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত পূজা উদযাপন পরিষদের সভায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনোত্তর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সুবিধাবাদীদের দ্বারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করা হয়। নীলফামারী থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হুমকি-ধমকির কারণে এ জেলায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ শুক্রবার কালীবাড়িতে এক জরুরী বৈঠক করেছে। গোড়াচাঁদ বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে পূজা অনাড়ম্বরভাবে পালিত হবে। পূজার সময় রাতে কোন অনুষ্ঠান হবে না এবং সন্ধ্যার পর সংখ্যালঘু কোন মহিলা পূজা মণ্ডপে আসবে না।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২০ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version