Site icon অবিশ্বাস

বগুড়ায় প্রতিমা ভাংচুর, নেত্রকোনায় নাটমন্দিরে লুট, পঞ্চগড়ে এবার অনাড়ম্বর পূজার সিদ্ধান্ত

সারা দেশে সংখ ̈ালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে পঞ্চগড় জেলায় এবার অনাড়ম্বরভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব ̧ড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবের জন ̈ তৈরি প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঐ এলাকার সংখ ̈ালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে বুধবার রাতে একদল সন্ত্রাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাটমন্দিরে পূজার উপকরণসমূহ লুট করে নিয়ে যায়। বগুড়া থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার কাহালু উপজেলার দুর্গাপুরে শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য তৈরি প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। এ ঘটনায় ঐ এলাকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার তারা উপজেলা সদর এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে দুর্গা প্রতিমা ভাংচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। দুর্গাপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন জানায়, নির্বাচনের পর থেকেই তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছিল। তাদের অপরাধ ছিল নির্বাচনে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করেছে। ঐ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে প্রায় দু’শ সংখ্যালঘু পরিবার রয়েছে। অপেক্ষাকৃত নিম্নআয়ের এসব মানুষ এবার নির্বাচনের পর নানা ঘটনায় শঙ্কিত হয়েছিল। এমনকি তারা দুর্গোৎসব পালন করবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন পূর্বে উপজেলা প্রশাসন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃতবস্থানীয়দের ডেকে ভালভাবে পূজা উদযাপন করার কথা বলে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। এর পর উপজেলার অন্যান্য এলাকার সঙ্গে দুর্গাপুরেও সংখ্যালঘু দুর্গোৎসবের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে ও স্থানীয় বাজার সংলগ্ন একটি মাটির ঘরে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দেয়। ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হলেও এখন শুধু প্রতিমার অলংকরণ বাকী। এ পর্যায়ে বুধবার রাতে সেখানে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়। পঞ্চগড় থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, গত বুধবার কেন্দ্রীয় দুর্গামন্দির চত্বরে পঞ্চগড় জেলা পুজা উদযাপন কমিটির এক জরুরী সভায় এবার অনাড়ম্বরভাবে পুজা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বণিকের সভাপতিত্বে এক সভা অুনষ্ঠিত হয়। সভা শেষে তিনি জনকন্ঠকে বলেছেন, নির্বাচনোত্তর সহিংস ঘটনার শিকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদানে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশ অনুযায়ী অনাড়ম্বরভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জেলার বিভিন্ন সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শনে জানা গেছে, সংখ্যালঘুরা সন্ত্রস্ত অবস্থার মধ্যে দিন যাপন করছে। তাদের অনেকের মধ্যে দেখা গেছে এক অজানা আতঙ্কের ছাপ। কখন কি হয় এই ভয়ে তারা তাদের এই বৃহত্তম উৎসবের কথা বেমালুম ভুলে গেছে। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে জেলায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা অর্ধেক নেমে এসেছে। স্থানীয় প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে যে সমস্ত এলাকায় পুজা মণ্ডপ স্থাপিত হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক আফতাব হাসান ও পুলিশ সুপার আজগর আলী সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব উদযাপনের জন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেছেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা দেয়া হবে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। নেত্রকোনা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, জেলার পূর্বধলা উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের হোগলা গ্রামে বুধবার রাতে একদল সন্ত্রাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাটমন্দিরে হামলা চালিয়ে প্রতিমার ব্যাপক ভাংচুর করে ও মন্দিরের পূজার উপকরণ সমূহ লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অন্যদিকে নেত্রকোনা পৌর শহরের জয় নগরের গৌরাঙ্গ সাহার দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পূর্বেই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এছাড়া জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ববৃন্দের নাম দিয়ে নেত্রকোনার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে মোটা অংকের চাঁদা চেয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাগেরহাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটে সংখ্যালঘুদের উপর অব্যাহত হামলা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহবান জানিয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ বৃহস্পতিবার বাগেরহাট শহরে মৌন মিছিল করেছে। সকালে কেন্দ্রীয় হরিসভা মন্দির থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে স্থানীয় শ্বাধীনতা উদ্যানে এক প্রতিবাদ সভা করেছে। এখানে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অমিত রায়, সাধারণ সম্পাদক এডঃ মিলন ব্যানার্জিসহ স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দ বক্তব্য রাখেন। মাগুরা থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মাগুরা জেলা বিএনপি সভাপতি এবং মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল বলেছেন, জেলায় সুষ্ঠুভাবে আসন্ন দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বুধবার রাতে মাগুরা সার্কিট হাউসে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, পূজার সময় কোন সমস্যা হবে না। গতবারের মতো সুষ্ঠুভাবেই পূজা হবে। তিনি বলেন, আমি কোনদিন সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেব না। পুলিশকে বলেছি সন্ত্রাসী যে দলের হোক তাকে গ্রেফতার করুন। বিএনপিসহ চারদলের জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ববৃন্দ মতবিনিময় কালে উপস্থিত ছিলেন।

দৈনিক জনকন্ঠ, ১৯ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version