Site icon অবিশ্বাস

বহিষ্কৃত বিএনপি নেতার কাণ্ড বান্দরবানে ৪ পাহাড়ির জমি দখল করে হাউজিংয়ের রাস্তা নির্মাণ

বান্দরবানে জেলা বিএনপির কথিত সাধারণ সম্পাদক কাজী মহতুল হোসেন যত্ন পাহাড় কেটে হাউজিং এস্টেট করার জন্য চারটি পাহাড়ি পরিবারের বসতভিটা ও চাষের জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে বান্দরবান থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি বলে ওই পরিবারগুলো জানিয়েছে। জানা যায়, বান্দরবান সেনা ব্রিগেডের সদর দপ্তর সংলগ্ন এলাকায় ৪৩নং খতিয়ানের ৭৩৮ দাগ নম্বরে পৈতৃক জমির ওপর উদ্বেন্দু বিকাশ তঞ্চঙ্গা ও সুশীল বিকাশ তঞ্চঙ্গাসহ চারটি পাহাড়ি পরিবার বসবাস করে। তাদের বসতভিটা ও চাষের জমি সংলগ্ন একটি পাহাড় কাজী মহতুল হোসেন যত্ন ৫-৬ বছর আগে অপর একজন পাহাড়ির কাছ থেকে কেনেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি পাহাড়টি কেটে হাউজিং এস্টেট করার জন্য তৎপরতা শুরু করেন এবং পাহাড় কাটার বুলডোজার ও ট্রাক চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণের জন্য প্রতিবেশী উদ্বেন্দু ও সুশীল তঞ্চঙ্গাকে বসতভিটার জায়গা-জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যত্নে জনস্বার্থের কথা বলে পৌরসভা থেকে গত এপ্রিল মাসে একটি রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিলেও এলাকার লোকজনের আপত্তির মুখে পরে প্রকল্পটি পৌরসভা বাতিল করে। সুশীল তঞ্চঙ্গা ও সুনীলা তঞ্চঙ্গা জানান, যত্নে গত ৯ জুন ২০-২৫ জন লোক নিয়ে বেড়া ভেঙ্গে সেগুন গাছ, আখের ক্ষেত ধ্বংস করে তাদের জায়গা জমি দখল করে নেন। এ সময় তারা ব্রিগেড সদর দপ্তরে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে রক্ষা পান। এ সময় ব্রিগেড মেজর শামীম গিয়ে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও নির্দেশ উপেক্ষা করে যত্নের লোকজন রাস্তা নির্মাণ করতে থাকে। তারা অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে উদ্বেন্দু গত মঙ্গলবার বান্দরবান থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসহাক জানান, ধর্তব্য অপরাধ নয় বলে মামলা নেওয়া হয়নি। তবে দাঙ্গাহাঙ্গামার আশঙ্কায় রাস্তার নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য যত্নকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের কর্মচারী উদ্বেন্দু তঞ্চঙ্গা আরো জানান, গত ১ ও ৩ এপ্রিল যত্নের ভাড়াটিয়া লোকজন তার বসতবাড়িতে হামলা চালায়। সে সময় তিনি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদনও করেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাম্যচিং মার্মা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে কাজী মহতুল হোসেন যত্ন জানান, পৌরসভা চেয়ারম্যানের মৌখিক নির্দেশে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে জমি দখল করে অবৈধভাবে রাস্তা নির্মাণের কথা তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেছেন, কারো ক্ষতি করার জন্য নয়, জনস্বার্থে ঠিকাদারের মাধ্যমে ওই রাস্তার নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পৌরসভা চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ব্রিগেড অফিস সংলগ্ন উদ্বেন্দুদের বাড়ি এলাকায় রাস্তা নির্মাণের জন্য যত্ন কিংবা অন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে বলা হয়নি। কাজী মহতুল হোসেন যত্ন নিজেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিলেও তাকে জেলা বিএনপি বহিষ্কার করেছে। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাম্যচিং মার্মা যত্নকে বহিষ্কারের কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, দুর্নীতি ও দলকে ব্যবহার করে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তাকে বহিষ্কার করা হলেও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোনো চিঠি পাওয়া যায়নি।

প্রথম আলো, ১৭ জুন ২০০২

Exit mobile version