দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা বাগেরহাটের কয়েকটি গ্রাম থেকে প্রায় ১ হাজার সংখ্যালঘু হামলা ও হয়রানির শিকার হয়ে পালিয়ে চলে গেছেন পার্শ্ববর্তী মংলা থানার চটেরহাটে। খবর বিবিসি’র। চটেরহাটে আশ্রয় নেয়া নারী-পুরুষদের শতকরা নব্বই জনই সংখ্যালঘু। এদের বেশির ভাগ এসেছেন মোড়েলগঞ্জ উপজেলার জিওধারা ইউনিয়ন থেকে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচনের পরদিন থেকে তাদের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে। প্রাণের ভয়ে তারা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। লক্ষীমালী গ্রামের বিন্দুরানী হালদার জানান, নির্বাচনের পর তার বাড়িতে হামলা হলে তিনি কোনরকমে পালিয়ে আসেন। তার ভাষায়, ’আমি ভয়েতে দৌড়াইয়া আইছি, ধরতে পারলে আমারে মাইরা ফালাইত।’ নির্বাচন- পরবর্তী হামলার পর জিওধারা ইউনিয়নের বেশিরভাগ সংখ্যালঘু পরিবারঘর ছেড়েছেন। কুমুদিনি হালদার বলেছেন , তার গ্রামের অবস্থা মোটেই ভাল নয়’ পরিস্থিতি খারাপ বলে যে পুলিশ আইছে, বেইল থাকতে থাকতে তোমরা চলে যাও। কে কোথায় আছে জানি না, ভয়েতে বেরিয়ে এসেছি।’ আওয়ামী লীগ কর্মী আবুল কালাম আজাদ বললেন, ’জিওধারা ইউনিয়নের সংখ্যালঘুরা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করার কারণে এই প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।’ মোড়েলগঞ্জের গ্রামগুলোতে এসব হামলার ঘটনা জানানো হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনকে। জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। জিওধারা ইউনিয়নে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও বসানো হয়েছে। কিন্তু সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বললেন, পুলিশ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। পুলিশতো আর সবসময় কাউকে পাহারা দিয়ে রাখে না। পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই আবার ওদের ওপর হামলা হচ্ছে। জিওধারা ইউনিয়ন শুধু নয় মংলা থানায় চটেরহাটে এসে আশ্রয় নিচ্ছেন আশেপাশের আরও অনেক গ্রামের মানুষ। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার শিকার এই ঘরছাড়া মানুষ গুলো ঘরে ফিরে যেতে চায়। তারা বলছেন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রহরা যথেষ্ট নয়। তারা চান রাজনৈতিকভাবে এই সহিংসতার অবসান ঘটানো হোক।
দৈনিক মুক্তকন্ঠ, ৮ অক্টোবর ২০০১