Site icon অবিশ্বাস

বিভিন্ন সংগঠনের আরো বিবৃতি ঃ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নিন্দা

নির্বাচনের পর সারা দেশে বিএনপি-জামাত শিবির চক্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংস হামলা ও দেশব্যাপী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উদ্বেগজনকভাবে বেড়েই চলছে। মায়ের সামনে মেয়েকে এবং মা ও মেয়েকে একই সঙ্গে ধর্ষণ করা হচ্ছে। থানায় মামলা দিতে গেলে মামলা নেওয়া হচ্ছে না। এসব ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃত্ববৃন্দ এক যুক্ত বিবৃতিতে উল্লেখ করেন,শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ক্রমাগত নির্যাতনের মুখে অসহায় মানুষ পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতেও আশ্রয় নিচ্ছে। বিবৃতিতে নেতৃত্ববৃন্দ বলেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এ বিষয় গুলোকে আরো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিত হিসেবে আখ্যায়িত করায় সরকারি দলের নেতারা দ্বিগুন উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ছে মা বোনের ওপর। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নেতৃত্ববৃন্দ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হামলা-পাল্টাহামলার মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তার দায়দায়িত্ব বর্তমান সরকারকেই বহন করতে হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুর রহমান, শাহে আলম, অসীম কুমার উকিল, জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকু, শফি আহমেদ, পঙ্কজ দেবনাথ, সুভাষ সিংহ রায়, কামরুন্নাহার লাইলী প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও নারী লাঞ্ছনাসহ যে অমানবিক নির্যাতন চলছে তাতে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ শিক্ষক সংগঠন গোলাপী দলের শিক্ষকদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় এ ধরনের অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সরকারি আইন রক্ষাকারী সংস্থাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি সহ জনসাধারণকে এই ধরনের অমানুষিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানানো হয়। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী খুরশীদ আলম এক বিবৃতিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, হত্যাসহ সারাদেশে লুটপাট, নির্যাতন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান। বিপ্লবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক মোশরেফা মিশু এক বিবৃতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, এসব সন্ত্রাসী বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড সকল গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী । এর ফলে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তিনি এসব সহিংস নির্যাতন বন্ধের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। শ্রী শ্রী গীতা সংঘ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে ধর্মীয় হিন্দু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেন, এই নৃশংস নির্যাতনের হাত থেকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রেহাই পাচ্ছে না। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্বেগজনক খবর আসছে। বিবৃতিতে সংঘের নেতাত্ববৃন্দ এই নিষ্ঠুর নির্যাতন বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে ১১দলের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের এক সভায় নেতৃত্ববৃন্দ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর অব্যাহত হামলা ও নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে নেতৃত্ববৃন্দ বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপি ইতিপূর্বে এসব ঘটনার দায়দায়িত্ব তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর রেখেছিল। কিন্তু ক্ষমতা গ্রহণের পরও তারা এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উপরন্তু অতীতের মতোই বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এসব হামলার খবরকে অতিরঞ্জিত এবং একটি দল ও সম্প্রদায়ের প্রচার বলে অভিহিত করেছেন। নেতৃত্ববৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করেন। ১১ দলের উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন রাশেদ খান মেনন, বিমল বিশ্বাস,মঞ্জুরুল আহসান খান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও নির্মল সেন। নেতৃত্ববৃন্দ অবনতিমূলক সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি যথাযথ উপলব্ধি করে দ্রুত তা নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি পুনঃআহ্বান জানান।

ভোরের কাগজ, ১৭ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version