Site icon অবিশ্বাস

বোয়ালমারীতে কিশোরী ধর্ষণঃ ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ ধর্ষকের সঙ্গেই বিয়ে

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এ ব্যাপারে পুলিশ কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ধর্ষণের পাঁচদিন পর স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

 

জানা যায়, গত ২৯ মার্চ উপজেলার পরমেশ্বদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া খালপাড় গ্রামে পনেরো বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরীকে ধর্ষণ করেন ওই গ্রামের শাকিব বিশ্বাস (১৮) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী। ওইদিন বিকেলে ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে শাকিব বিশ্বাস। এ সময় কিশোরীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে শাকিব পালিয়ে যায়। ওই রাতেই কিশোরীর বাবা বোয়ালমারী থানায় গিয়ে ধর্ষক শাকিব বিশ্বাসের নামে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ওই কিশোরীর বাবা একজন ভ্যানচালক। তিন মেয়ের মধ্যে এই কিশোরীটিই বড়। ধর্ষণের ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় কয়েকজন মাতুব্বর গত শনিবার (৩ এপ্রিল) রাতে কিশোরীর বাড়িতে সালিসে বসে ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে দেন। তবে কিশোরী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এ বিয়ের কোনো কাবিন করা সম্ভব হয়নি। পরদিন রবিবার ছেলে-মেয়ে দুইজনে ফরিদপুর আদালতে গিয়ে কোর্ট এফিডেভিট করেন।

সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও ময়েনদিয়া বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মান্নান মাতুব্বর বলেন, ছেলে-মেয়ে দু’জনে খালাতো ভাই-বোন। তারা ফোনে কথা বলাবলি করতো। আসলে ধর্ষণ হয় নাই। গ্রামে ভালো-খারাপ দুই ধরনের মানুষ থাকে। হয়তো কোনো খারাপ মানুষ মেয়ের পরিবারকে ফুঁসলিয়ে থানায় অভিযোগ করায় ছিল। দুই পরিবারই অসহায় এজন্য বিষয়টি সামাজিকভাবে নিস্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।

শাকিব বিশ্বাসের মা ঝর্ণা বেগম জানান, আমার ছেলেকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তবে সে ঝামেলা মাতুব্বরা শালিসে বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনা মুকুল বলেন, আমি গত শুক্রবার জানতে পারি ময়েনদিয়ার খালপাড়ায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এ ঘটনা পুলিশ ফাঁড়িতে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবারকে বিয়ে দিতে নিষেধ করে আসেন। কিন্ত আজকে শুনলাম ধর্ষণের ঘটনা।

ধর্ষণের অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজ বলেন, ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে দুবার গিয়েও শাকিব বিশ্বাসকে পাইনি। তাকে পেলে আটক করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা তদন্ত সাপেক্ষে নেওয়া হতো।

তার আগেই ময়েনদিয়া এলাকার মান্নান মাতুব্বর জানান, তারা স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছেন। দুই পরিবারই গরিব। তারা দুই পরিবারই বিয়ে দিতে ও করতে সম্মত আছে। পরে আমি বিষয়টি তদন্ত ওসি স্যার মো. আবুল খায়ের মিয়ার সাথে কথা বলি। স্যার বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মান্নান মাতুব্বরের শালিস নামা থানায় জমা দেবে বলে জানিয়েছেন। সেটি এখনও আমরা হাতে পাইনি। হাতে পেলে বুঝব এ ঘটনার কি সমাধান দেওয়া হয়েছে। শালিস বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সদস্যর তো সেখানে থাকার কথা নয়।

বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল খায়ের মিয়ার কাছে এ ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ষণের অনেক ঘটনাই তো ঘটে, সব ঘটনা মনে রাখা সম্ভব নয়। ঘটনার তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে বললে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই।

কালের কণ্ঠ

Exit mobile version