Site icon অবিশ্বাস

ব্যস্ততম সড়কে কান ধরে দাঁড় করানো হলো কওমি মাদ্রাসার ১০ শিশুশিক্ষার্থীকে,অভিযুক্ত শিক্ষক আটক

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহরে ‘মাদ্রাসাতুত তাকওয়া’ নামের একটি কওমি মাদ্রাসার ১০ শিশুশিক্ষার্থীকে ব্যস্ততম সড়কে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক মীর মিনহাজুল আবেদীন আফ্রিদীকে (২২) আটক করেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে তাঁকে ওই মাদ্রাসা থেকে আটক করা হয়।

মীর মিনহাজুল আবেদীন আলমডাঙ্গা শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা। তিনি আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্নাতক পরীক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রায় এক বছর ধরে তিনি ওই মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। গত বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদের ওই নির্যাতনের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর তাঁকে ওই মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার করা হয়।

নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা হলো পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শ্রাবণ সাকিব, আবদুল মঈন, আমির হামজা, সায়েম আহমেদ, রাতুল আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান; দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র কাওসার আহমেদ, শিমুল, তামিম হাসান ও মুসকিন আহমেদ। তাদের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। সবাই মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র।

নির্যাতিত শিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পড়া না পারার কারণে গত সোমবার দুপুরে তাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কান ধরে মাদ্রাসা থেকে শহরের প্রধান সড়ক পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়, তীব্র রোদের মধ্যে সড়কে কান ধরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে তারা। পরে একইভাবে তাদের মাদ্রাসায় ফিরতে বাধ্য করেন মীর মিনহাজুল আবেদীন।

শত শত মানুষের সামনে কান ধরে থাকতে বাধ্য করায় ছাত্ররা মাদ্রাসায় ফিরে লজ্জায়-অপমানে ব্যাপক কান্নাকাটি করে। তাদের মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সায়েম আহমেদ কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে মাদ্রাসা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে যায় সে। সায়েম ছাড়াও আরও পাঁচজন ওই দিন বাড়ি গিয়ে আর ফিরে আসেনি।

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত হয় আলমডাঙ্গা শহরের আনন্দধাম এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে। মূলত কোরআন শিক্ষার (হেফজ) পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী সাধারণ শিক্ষা হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পড়ানো হয় এখানে। মীর মিনহাজুল আবেদীন বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পড়াতেন। মোহতামিম মাহাদী হাসান ও আরবি শিক্ষক হায়দার আলী কোরআন শিক্ষা দেন।

গতকাল দুপুরে মাদ্রাসা চত্বরে গিয়ে নির্যাতিত শিশুদের মধ্যে চারজনকে পাওয়া যায়। তাদের একজন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র কাওসার আহমেদ। কাওসার জানায়, ওই দিন বাংলা পড়া না পারায় দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড় করিয়ে রাখায় তারা ১০ জনই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মীর মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘ওদের অনেক দিন ধরে পড়াচ্ছি। ফাঁকিবাজি করে। কোনো দিনও পড়া তৈরি করে না। কয়েক মাস ধরে একই পড়া পড়ালেও কেউ তা পড়ছে না। ওই দিন আমার মাথা ঠিক ছিল না। পরে ভুল বুঝতে পেরে সব ছাত্রের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’

মোহতামিম মাহাদী হাসান বলেন, ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর এই মাদ্রাসায় এটাই ছাত্র নির্যাতনের প্রথম ঘটনা। বিষয়টি বৃহস্পতিবার জানার পর ওই দিনই শিক্ষক মিনহাজুল আবেদীনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

আলমডাঙ্গা থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান মুন্সী শুক্রবার বিকেলে বলেন, গতকাল দুপুরে ওই শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলছে।

প্রথম আলো

Exit mobile version