মায়ের সামনে কলেজপড়ুয়া মেয়ের সম্ভ্রম লুট করে নৌকায় ভোট দেওয়ার শাস্তি দিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত । দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বৃত্তরা এই মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালালেও মেয়েটির সাহায্যে এগিয়ে আসেনি কেউ⎯না প্রশাসন, না কোনো প্রতিবেশী। নির্বাচনের পাঁচ দিন পর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, গত ৬ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে ভাঙ্গার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেনের ভাই রশিদপুর গ্রামের হাবি, রায়নগরের পলাশ, আজিমনগরের মোঃ সেকেন, জামাল, এসকেন, কামাল ও টেক্কা-এই সাত দুর্বৃত্ত আজিমনগর গ্রামের ওই সংখ্যালঘুর বাড়িতে হানা দেয়। তারা বাড়ির গৃহকর্তাকে নাম ধরে গালিগালাজ করে বলে, নৌকায় ভোট দেওয়ার মজা দেখাব। এতে ভয় পেয়ে গৃহকর্তা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে দুর্বৃৃত্তরা জোর করে ঘরে ঢুকে মদ খেয়ে পৈশাচিক উল্লাস শুরু করে। নরপশুরা মায়ের সামনেই কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। অসহায় মা সন্ত্রাসীদের পায়ে ধরেও মেয়ের সম্ভ্রম বাঁচাতে পারেননি। বাঁধা দেয়ায় দুর্বৃত্তরা তাকেও মারধর করে। নরপশুদের এই মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলে রাত ১টা পর্যন্ত। এরপরেও রেহাই পায়নি হতভাগা মেয়েটি। ঘরের দামি জিনিসপত্রসহ তাকেও টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় আরেক জায়গায়। ভোররাতে যখন বাড়ির উঠোনে মেয়েটিকে ফেলে রেখে চলে যায় দুর্বৃত্তরা , তখন তার অবস্থা গুরুতর। সংখ্যালঘু পরিবারটি ভোররাতেই মারাত্মক অসুস্থ মেয়েটিকে নিয়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পালিয়ে যায়। পরদিন সন্ত্রাসীরা এসে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের হুমকি দেয়, গতরাতের খবর জানাজানি হলে বা পুলিশের আশ্রয় নেয়া হলে সবাইকে হত্যা করা হবে। সন্ত্রাসীরা এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়েটির প্রতিবেশীরাও এখন ভয়ে মুখ খুলছে না। পুলিশ খবর পেয়ে সংখ্যালঘু পরিবারটিকে বাড়ি ফিরিয়ে আনলেও মেয়েটিকে আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। আবারও হামলার ভয়ে মেয়েটির বাবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিবারের অন্য কেউ মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না। ভাঙ্গা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রেজাউল করিম গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন , নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার মামলা করতে চাইছে না বিধায় পুলিশের পক্ষ থেকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। প্রথম আলো, ১৪ অক্টোবর ২০০১