‘আমি হাতজোড় করে বারবার কইছি তোমরা আমার পরনের কাপড়টা ফিরিয়ে দাও। তাও দেয়নি। ওরা আমাকে ও আমার ছেলেকে হাত-পা বেঁধে উলঙ্গ করে দুই-দুইবার ছবি তুলেছে। এ মুখ যেন আমাকে দেখাতে না হয়। ভিটেতে আর ফিরতে চাই না। হাসপাতালেই যেন আমার মরণ হয়।’ জামায়াত-শিবির ক্যাডার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার গুরুতর আহত সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার দুর্গম ফতেপুর গ্রামের ৬০ বছরের বৃদ্ধা সুন্দরীবালা হাসপাতালের বেডে শুয়ে ডুকরে ডুকরে কেঁদে সাংবাদিকদের কাছে এ কথাগুলো বলছিলেন। বুধবার জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃত্ববৃন্দ একদল সাংবাদিক সঙ্গে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সুন্দরীবালাকে দেখতে গেলে তিনি সেদিনের নির্যাতনের কাহিনী এভাবেই বর্ণনা করেন। বৃদ্ধার নির্যাতনের কাহিনী শুনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্ববৃন্দ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সুন্দরীবালার একমাত্র ছেলে গোবিন্দ সরদার জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত ২ জুন সকালে স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার বাহিনী তার বাড়িতে হামলা করে। জামায়াত সমর্থক একই গ্রামের মোসলেম গাজী ও তার ছেলে শিবির ক্যাডার মোমেন ও মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩০/৪০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার বাড়িতে হামলা করে। তারা বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট এবং গোবিন্দ সরদারের ভিটার ৫৪ শতক জমির মধ্যে ৫২ শতক জমি দখল করে দোচালা ঘর তোলে। সন্ত্রাসীরা প্রথমে গোবিন্দ সরদারের পিতা কুরন সরদারকে (৭০) বেঁধে মারধর করে। পরবর্তী সময়ে তারা গোবিন্দ সরদার ও তার মা বৃদ্ধা সুন্দরীবালাকে বিবস্ত্র করে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে ও বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের নৈশপ্রহরী সামছুজ্জামানের ছেলে রবিউল দু’বার ছবি তোলে। এর পর মোসলেম গাজীর বাড়িতে নিয়ে তারা মা-ছেলেকে বস্তাবন্দি করে বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। গোবিন্দ সরদারের বাড়িতে হামলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারই প্রতিবেশী দামোদর কুমার কালীগঞ্জ থানায় এসে পুলিশকে খবর দেয়। থানার ওসি একজন এসআইকে ঘটনাস্থলে পাঠান। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলেও বুধবার আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়েছে। গোবিন্দ সরদার এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছেন। আসামিদের জামিনে মুক্তি পাওয়ার খবর শুনে গোবিন্দ সরদার ও তার মায়ের হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটছে আতংকে। কালীগঞ্জ থানার ওসি ওহিদুল হক বলেন, নির্বাচনোত্তর এত বড় ঘটনা কালীগঞ্জে ঘটেনি। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপাপ্ত আহ্বায়ক প্রকৌশলী মুজিবর রহমান ও ডা. এএফএম রুহুল হকের নেতৃত্ব একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর এই হামলাকে তারা ’৭১-এর বর্বরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতার, নতুনভাবে এজাহার গ্রহণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
যুগান্তর, ৬ জুন ২০০২