নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামাতপন্থীদের অত্যাচারে পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকার সংখ্যালঘুরা ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত। এসব এলাকার সংখ্যালঘুরা ইতোমধ্যে রাতের বেলা বাড়িতে ঘুমানো ছেড়ে দিয়েছে। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে তারা।
গত ১৬ই সেপ্টেম্বর রাতে সদর উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নের রেখাখালী গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় জামাতের সমর্থক ও এলাকার সন্ত্রাসী ইলিয়াস এবং মান্নানের নেতৃত্ব ৫০/৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল হামলা চালায়। হামলাকারীরা প্রায় ৭০০ হিন্দু ভোট অধ্যুষিত বাওয়ালী, বিশ্বাস ও মিস্ত্রি বাড়িতে হামলা চালালে বাড়ির লোকেরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ওই চক্র সূর্যকান্ত মিস্ত্রির বাড়ির সামনের আশ্রম ভাঙচুর করে। আশ্রমের মূর্তি ভাঙচুর করে তারা ঐ বাড়ির মহিলাদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেয়। ওই বাড়ির নিখিল বাওয়ালী, বিমল বাওয়ালী ‘সংবাদকে জানান ভোট দিতে পারব কিনা জানি না, তবে
ভোটের পর যে এলাকায় থাকতে পারব না তা নিশ্চিত। সন্ত্রাসীদের হামলা করা ওই গ্রাম থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে জামাত প্রার্থী সাঈদীর বাড়ি।
চরনী পত্তাশী, সাউথখালী, রামচন্দ্রপুর এলাকার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায়ও সাঈদী অনুসারী জহিরউদ্দিন খানের নেতৃত্বে হুমকি দেয়া হচ্ছে অহরহ। সাঈদীর বাড়ি সংলগ্ন সাউথখালী এলাকার ৫/৬শ হিন্দু ভোটারের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সকল এলাকার সংখ্যালঘুরা ১৯৯৬-র নির্বাচনেও ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেনি বলে ‘সংবাদ’কে জানিয়েছেন। তারা জীবনের ভয়ে এ সকল ঘটনা থানা পুলিশকেও জানাতে সাহস পায়নি। সদর উপজেলার বালিপাড়া ও পত্তাশী এ দুটি ইউনিয়নেই প্রায় ১০ হাজার হিন্দু ভোটার। তাদের একটাই দাবি জামাতপন্থীদের হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ। তা না হলে তারা আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে যাবে না।
নাজিরপুর উপজেলার বিল এলাকা কলারদোয়ানিয়া, পেনাখালী, সাচিয়া এলাকা হিন্দু অধ্যুষিত। এ সকল এলাকায়ও রাতের আঁধারে এক শ্রেণীর সন্ত্রাসী ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে। মুখোশধারী এরা জামাত সমর্থিত বলে জানা গেছে। এ সকল এলাকায় জামাত প্রার্থী সাঈদীর কুরুচিপূর্ণ ক্যাসেট বাজানো হচ্ছে। আর এই ক্যাসেট নিয়ে প্রতিদিন হাতাহাতি লেগেই আছে।
সংবাদ, ২০ সেপ্টেম্বর ২০০১
কৃতজ্ঞতা: শ্বেতপত্র-বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ১৫০০ দিন