Site icon অবিশ্বাস

ভোলার তিনটি উপজেলার সংখ্যালঘুরা আতংকে

পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোলার বোরহানুদ্দিন, লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা চরম আতংকে রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের উপর নির্যাতন শুরু হয়েছে। হুমকি দেয়া হচ্ছে ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে না যাবার জন্য। চালানো হচ্ছে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট। এমনও শোনা গেছে, তজুমদ্দিনের একটি এলাকার সংখ্যালঘু নারীরা রাতে বাড়ী থাকেন না। আর এসব নির্যাতনের বেশিরভাগ অভিযোগ আসছে চার দলীয় জোটের কর্মীদের বিরুদ্ধে। ঐ তিনটি উপজেলায় সম্প্রতি দু’দফা অনুসন্ধান চালিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ভোলা জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। বিশেষ করে বোরহানুদ্দিন, লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ আতংক তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ তিনটি উপজেলায় আমরা যখন খোঁজ খবর নেই, তখনও তারা মুখ খুলতে সাহস করেনি। বেশীরভাগ মানুষের বক্তব্য ছিলো, এ নিয়ে লেখালেখি হলে তাদের উপকারের বদলে আরো বেশি ক্ষতি হবে। আর সে কারণে তারা তাদের ঘটনাগুলো স্বীকার করতে চায়নি। তারা তাদের নিজেদের ঘটনা না বলে বরং তার পাশের বাড়ীর বা একই পাড়ার অপর বাড়ীতে কি ঘটছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। আবার আমাদের এও স্মরণ করিয়ে দিতে ভুলেননি যে, ক্ষতিগ্রস্তদের নাম লেখা হলে তারা আরো বিপদে পড়তে পারেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর বোরহানুদ্দিন, তজুমদ্দিন ও লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানা হুমকি ধমকি দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়েছে। প্রাণের ভয়ে বেশিরভাগ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ মামলা করতে সাহসী হয়েছেন এমন জানা নেই। এসময় মৌমাছি বাহিনী নামে লালমোহনে একটি বাহিনীও তৈরী হয়। এ বাহিনীর সবাই বিএনপির কর্মী ও সমর্থক। উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি কামাল পারভেজ ও তার চাচাত ভাই মিজান এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। কথিত রয়েছে, এ বাহিনী সতের লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করা হলেও প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়নি। আর এ ঘটনায় লালমোহন ও অপর দু’উপজেলার চাঁদাবাজদের সাহস বেড়ে যায়। এ উপজেলার হরিগঞ্জ বাজারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দোকানপাট এ পর্যন্ত তিন দফা হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। তজুমদ্দিন উপজেলার শম্ভুপুর এলাকার ২০/২৫টি বাড়ীতে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট করেছে চারদলীয় জোট কর্মী-সমর্থকরা। তারা হুমকি দিয়েছে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে না যাবার জন্য। একই উপজেলার চানপুর ইউনিয়নে ব্যাপক চাঁদাবাজী চলেছে। এখনো চলছে। এখানে নারী নির্যাতনের অভিযোগও পাওয়া গেছে। এখানকার কয়েকজন সম্ভ্রান্ত সংখ্যালঘু ব্যক্তি আমাদের জানান, বেশিরভাগ সংখ্যালঘু নারী রাতে বাড়ী থাকেন না, শালীনতাহানী বা নির্যাতনের শিকার হতে পারেন এ আশংকায়। মাত্র ১৫/২০ দিন আগে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী গ্রামের এক সংখ্যালঘু বাড়ীর তিন/চার ঘর হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের শিকার হয়। এক সংখ্যালঘু তরুণী সম্ভ্রম বাঁচাতে পাশের খালে ঝাঁপিয়ে পড়েন। সাঁতরে অপর পাড়ে গিয়ে সম্ভ্রম বাঁচাতে প্রতিবেশীর কাছে সহায়তা চান। এ নিয়ে থানায় মামলাও হয়েছে। তবে কেউ গ্রেফতার নয়নি। ভোলা জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ভোলা-২ আসনের বোরহানুদ্দিন উপজেলার ১ লক্ষ ৬২ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ হচ্ছে সংখ্যালঘু ভোটার। ভোলা-৩ আসনের তজুমদ্দিনের ৭৮ হাজার ভোটারের মধ্যে ৩০ থেকে ৩২ ভাগ ভোটার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। লালমোহনের প্রায় পৌনে দু’লাখ ভোটারের মধ্যে ২০ থেকে ২২ শতাংশ ভোটার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা টার্গেট হয়ে পড়েছে। তারা নিষ্পেষিত হচ্ছে নির্বাচনী প্রার্থীদের যাঁতাকলে। চারদলীয় জোটের কর্মী ক্যাডাররা তাদের চিহ্নিত করছে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে। তাই আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর নামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এ নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এসব উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা তাদের উপর যে কোন সময়ে হামলা নির্যাতন হতে পারে⎯ এমন একটা আতংকের মধ্যে রয়েছেন। নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে ততোই তাদের আতংক বাড়ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পরপরই এসব উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার নেমে আসে। চারদলীয় জোটের কর্মী-ক্যাডারদের ধারণা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন করলে, আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক ভেঙ্গে ফেললে তাদের বিজয় নিশ্চিত হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৩ সেপ্টেম্বর’ ২০০১

Exit mobile version