Site icon অবিশ্বাস

মাধবখালী সন্তোষপুর এখন ক্যাডার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ নেতার স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েও রক্ষা পাননি গোবিন্দ ডাক্তার

গোবিন্দ ডাক্তার পেশায় পল্লী চিকিৎসক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজ গ্রাম হচ্ছে কাঁঠালতলী। এই কাঁঠালতলী বাজারে চৌধুরী পরিবারের জমিতে ভিটি খাজনা দিয়ে দোকান করেছিল। ওষুধের দোকান। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থক। তাই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থনে কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁর এই কাজ ভাল চোখে দেখেনি চৌধুরীরা। তাই নির্বাচনের পরে তাঁর ওষুধের দোকানটির দিকে নজর পড়ে বিএনপি কর্মীদের। দোকানটি তখন চালাত তার ভাই মাধব। মাধবের শত অনুরোধেও কাজ হয়নি। হামলা করে বিএনপি ক্যাডাররা দোকানটি ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ ঘটনার পর থেকে গোবিন্দ ডাক্তার এলাকাছাড়া। দিশাহারা হয়ে পড়েন তিনি। কিভাবে পৈতৃক ভিটায় ফিরবেন বুঝতে পারছিলেন না। শোনা যায়, গত কোরবানি ঈদের সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী সুরাইয়া চৌধুরী গ্রামের বাড়িতে আসেন। খবর পেয়ে গোবিন্দ ডাক্তার তাঁর কাছে ছুটে যান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার মতো অন্যায় (!) করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মাফ করে দেন সুরাইয়া চৌধুরী। বলেন তাঁকে বাড়ি গিয়ে থাকার জন্য। আনন্দ চিত্তে নিজ বাড়ি সন্তোষপুরে রওনা হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়ির কাছেই একটি ব্রিজ। ব্রিজ পেরুবার সাথে সাথেই তার ওপর হামলে পড়ে ক্যাডাররা। তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ফেলে যায় রাস্তায়। পরবর্তীতে জনা কয়েকের সহায়তায় আবারও এলাকা ছাড়েন তিনি। পায়রা পাড়ের আতঙ্কিত জনপদ এখন মীর্জাগঞ্জ। উপজেলার মাধবখালী ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামই ক্যাডার বাহিনীর থাবায় ক্ষতবিক্ষত। সাধারণ মানুষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভয়ে এখন মূক বধির হয়ে পড়েছে। সবার মনে আতঙ্ক। কথা বলার সময় এমনভাবে চারপাশে তাকান যেন চারপাশে অসংখ্য মাইক্রোফোনে তাদের কথা রেকর্ড হচ্ছে। এমনকি বিএনপিরও অনেকে বিরক্ত। মীর্জাগঞ্জে আমাদের এক বিএনপি নেতা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেছিলেন, ‘আমরা অনেকেই চেয়েছিলাম আলতাফ হোসেন চৌধুরী আমাদের লোক। তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হলে আমাদের হয়ত ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। তবে তা দুর্ভাগ্য।’ সৌদি সহায়তায় নবনির্মিত মসজিদ ডানে রেখে আমরা কাঁঠালতলী বাজারে ঢুকি। জমজমাট বাজার। লোকে লোকারণ্য। সপ্তাহে দু’দিন এখানে হাট বসে। বাজারে ঢুকতেই খপ্পরে পড়ে যাই মাধবখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনির খন্দকারের। স্থানীয়ভাবে তার পরিচিতি ‘মনির খোন্নার’ নামে। লুঙ্গি আর শার্ট পরা, হাতে ডায়েরি। আমাদের সঙ্গীকে কোন সৌজন্যতা বা সম্ভাষণ ছাড়াই সরাসরি আমাকে দেখিয়ে নাম জানতে চায়। জানতে চায় ঠিকুজী সাকিনের সন্ধান। বক্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়। তবে উত্তরদাতা আমার কাজের পরিচয়টি তাকে জানাননি। এই মনির খন্দকার এ মুহূর্তে মাধবখালী ইউনিয়নের প্রচণ্ড ক্ষমতাধর পাঁচজনের একজন। তার অঙ্গুলী হেলনে অনেকেরই ভাগ্যের চাকা বন্ধ হয়। বাজারে বসেই আমরা গোবিন্দ ডাক্তারের করুণ কাহিনী শুনি। আরও জানতে পারি, তার ব্রুনাই প্রবাসী ছেলে তপন এলাকায় এলে তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয় পাঁচ হাজার টাকা। বাজার থেকে ফেরার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চেম্বার চোখে পড়ে। টিনশেড বড়সড় ঘর। ভিতরে জনাকয়েক লোক বসা। এটা বর্তমানে বিএনপির অফিস হিসাবেই ব্যবহৃত হয়। এ ঘরের লাগোয়া ডানদিকের শূন্য ভিটা নজরে আসে। এখানেই ছিল গোবিন্দ ডাক্তারের দোকান। এখন শূন্য ভিটায় ঘুঘু চরে। মাধবখালী ইউনিয়নকে বিরোধী দল শূন্য করতে পেরেছেন স্বানীয় বিএনপির কর্ণধাররা। তাদের স্বাধীন জমিদারিতে তারা যা ইচ্ছা তা করার অবাধ লাইসেন্স পাবার কারণে এখন কেউ আর প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করার আগেই টুঁটি চেপে ধরার কারণে এখন সবাই নীরব। শুধু বিক্ষুব্ধ পায়রা নদী প্রতিবাদের আগুন ছড়ায় পাড় ভেঙ্গে। একমাত্র তার ওপরেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ক্যাডার বাহিনী।

দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৯ মে ২০০২

Exit mobile version