শাহরিয়ার কবির কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বলেছেন, সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিয়ে যে ছবি তিনি তৈরির উদ্যেগ নিয়েছিলেন সেটা শেষ করবেন। এটা থেকে কেউ তাকে নিরস্ত্র করতে পারবে না। তিনি বলেন, তারা একবার ফুটেজ নিয়েছে। এরকম হাজার ফিট ফুটেজ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া যাবে। সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নিয়ে ছবি বানানো তার দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা। ১ অক্টোবর নির্বাচনের পর সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের কারণে দেশত্যাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করার ফলে তার নামে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। এ মামলায় জামিনে মুক্তি পেয়ে গতকাল আড়াই মাস পর তিনি নিজ বাড়িতে ফেরেন। তার নাতি-নাতনিরা কাঁচা হাতে বাড়ির দরজায় লিখে রেখেছে, ‘ওয়েল কাম ব্যাক হোম’। নাতি-নাতনিরা বলছে ঈদের দিন নানু (শাহরিয়ার কবির) বাসায় ছিল না। ঈদও ঠিক মতো পালন করতে পারেনি। আজ (গতকাল) তাদের ঈদ। বাড়িতে ফিরে পরিবার পরিজন সকলের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি আগত শুভানুয়ীদের সঙ্গেও তিনি কথা বলছিলেন। এরই ফাঁকে তিনি ভোরের কাগজকে সাক্ষাৎকার দেন। তিনি বলেন, জামিনের আদেশ পাওয়ায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে সকলেরই মত প্রকাশের অধিকার আছে। তিনি বলেন, কেউ যদি তার ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন হয়েছে এটা বর্ণনা করে আর অন্য কেউ তা ধারণ করলে এর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কি থাকতে পারে এটা বোধগম্য নয়। তার ধারণ করা ক্যাসেটগুলোতে (বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে) ৩০ জন দেশত্যাগী হিন্দুর সাক্ষাৎকার রয়েছে বলে তিনি জানান। নির্যাতনের ধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, নজিরবিহীন নির্যাতন হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। দেশত্যাগী হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ’৭১-এ যারা দেশত্যাগ করেছিল, তারা অপেক্ষায় ছিল দেশ স্বাধীন হলে আবার দেশে ফিরে আসবে। কিন্তু এ সময়ে তাদের সামনে সে আশাও আর নেই। আশি বছরের এক বৃদ্ধা মন্তব্য করেছেন, ‘ভিক্ষা করে খাবো, তবু দেশে আর ফিরে যাবো না।’ তিনি বলেন, কোন অবস্থায় মানুষ দেশ ছেড়ে যায় তা নিয়ে আমরা একটুও ভাববো না? বার বার বানোয়াট, সাজানো, অতিরঞ্জিত বলে পাশ কাটাতে চাইবো?’ কারাগারের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বিস্তারিত কিছু তিনি জানাতে চাননি। তিনি বলেন, তারা নানাভাবে ‘ইন্টারোগেশান’ করেছে। কখনো কখনো জয়েন্ট ইন্টারোগেশান করেছে। কিন্তু তারপরও মাথানত করিনি। তাদের ইচ্ছামতো বক্তব্য দেইনি। কারাগারে তার ওপর মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। সাংবাদিক, লেখক হিসেবে তাকে কাগজ-কলমও দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এছাড়া বন্দীরা সকলে তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে। অনেকেই কারাগার থেকে বেরিয়ে নির্মূল কমিটি করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এমনকি বিএনপির ছেলেরাও সরকারের এ আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তার প্রতি সরকারের আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে পুলিশ ও কর্মকর্তারা যে আচরণ করেছে এটা ছিল পাকিস্তানি আচরণ। তারা যেভাবে ব্যাগ খুলে তল্লাশি করছিল তাতে মনে হচ্ছিল ’৭১-এ আছি। এমনকি জামিন পাওয়ার পরও সন্দিহান ছিলাম বাড়ি ফিরতে পারবো কিনা। তিনি তার পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, আঘাত এসেছে বাঙালিত্বের ওপর। এ আঘাতের মোকাবিলা করতে হবে। যেন হিন্দু-মুসলিম সকলে মিলেমিশে এদেশে বাস করতে পারি তার জন্য লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি আগের মতো আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন বলে জানান। এছাড়া তিনি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইস্যুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। এছাড়া তার মুক্তির ব্যপারে আইনজীবী ও সাংবাদিকদের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।
ভোরের কাগজ, ২১ জানুয়ারি ২০০২