Site icon অবিশ্বাস

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র: সংঘর্ষ নয়, পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

কিশোরদের দুই পক্ষের ‘সংঘর্ষে নয়’, কর্মচারীদের ‘মারধরে’ যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে; আর তাতে ‘যৌক্তিকতা’ রয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

 

১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাটে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন কিশোরের মৃত্যু হয়, আহত হয় আরও অন্তত ১০ জন।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের বরাতে পুলিশ প্রথমে বন্দি কিশোরদের ‘দুই পক্ষের সংঘর্ষে’ হতাহতের এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছিল।

কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত কিশোরদের অভিযোগ, কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দফায় দফায় মারধর করে, তাতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।

খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম বলেন, “সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে মর্মান্তিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমরা যারা অপরাধ নিয়ে কাজ করি, তারা ঘটনার প্রায় ছয় ঘণ্টা পরে বিষয়টি অবহিত হয়েছি। যে কারণে মূল ঘটনা জানা জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

“এখন যারা আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তারাই এই ঘটনার মূল সাক্ষী। মৃত্যুপথযাত্রী কেউ মিথ্যা কথা বলে না। তাদের কথার সত্যতা ও যৌক্তিকতা রয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানে তাদের বিষয় গুরুত্ব পাবে। সবশেষ আমি বলতে চাই, এ ঘটনা একপক্ষীয়।”

যশোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বন্দি চুয়াডাঙ্গার এক কিশোর বলে, “গত ৩ অগাস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড (আনসার সদস্য) নূর ইসলাম তার চুল কেটে দিতে বলেন।

“সেদিন আমি কেন্দ্রের প্রায় দুইশ জনের চুল কেটে দেওয়ায় হাত ব্যথা ছিল। সে কারণে তার চুল পরে কেটে দেব বলে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হন। গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন এক পর্যায়ে কয়েকজন কিশোর ওই গার্ডকে মারধর করে।

“ওই গার্ড অফিসে নালিশ করেন যে, কিশোররা মাদক সেবন করে তাকে মারধর করেছে। কিন্তু কিশোররা কর্তৃপক্ষকে জানায়, তারা মাদক সেবন করেনি। ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে আমাদের অফিসে ডাকা হয়। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। আমরা ঘটনা জানানোর একপর্যায়ে কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশন অফিসার মুশফিকসহ অন্য স্যাররা আমাদের মারধর করেন।”

যশোরের বসুন্দিয়া এলাকার আরেক কিশোর বন্দি বলে, “নিহত রাসেল আর আমি একই রুমে থাকতাম। আগামী মাসেই রাসেলের জামিন পাওয়ার কথা ছিল।”

এই কিশোরের অভিযোগ, “স্যারদের বেদম মারপিট আর চিকিৎসা না পেয়ে রাসেল মারা গেছে। প্রবেশন অফিসার মারধরের সময় বলছিলেন, ‘তোদের বেশি বাড় বেড়েছে। জেল পলাতক হিসেবে তোদের বিরুদ্ধে মামলা করে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে।”

তার অভিযোগ, মারধর করে বন্দি কিশোরদের কেন্দ্রের খোলা চত্বরে এখানে-সেখানে ফেলে রাখা হয়। পরে একজন করে মারা গেলে তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে চার দফায় আহতদের হাসপাতালে আনা হয়।

তবে প্রবেশন অফিসার মুশফিক আহমেদ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তার দাবি, “সম্প্রতি কেন্দ্রে বন্দি কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এরই জেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। রড ও লাঠির আঘাতে মারাত্মক জখম হয় ১৪ কিশোর। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রেই তাদের চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা চলে।

“অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় একে একে আহতদের উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে নাইম, পারভেজ ও রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।”

শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি থানায়।

পুলিশ কর্মকর্তা নাহিদুল ইসলাম বলেন, এখনও কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। বাদী যে কেউ হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্তদের স্বজন বা তৃতীয় কোনো পক্ষও হতে পারে। কাউকে না পাওয়া গেলে পুলিশ মামলা করবে।

বালকদের জন্য দেশে দুটি কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি গাজীপুরের টঙ্গিতে, অন্যটি যশোর শহরতলির পুলেরহাটে।

যশোর কেন্দ্রে মোট বন্দির সংখ্যা ২৮০ জন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রের সহকারী পরিচারক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

যশোরের এ কেন্দ্রে লাশ উদ্ধার ও মারধরের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। দায়িত্বে অবহেলা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য সুপারিশও করেছিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

Exit mobile version