Site icon অবিশ্বাস

যুবককে ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে নির্যাতন করেন রাজশাহী রেঞ্জের এসপি

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে এক যুবককে তুলে নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নির্যাতন ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গোলাম মোস্তফা নামের ওই যুবক বলছেন, ডিবি কার্যালয়ে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) বেলায়েত হোসেন। এসপি অবশ্য এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলেছেন।

 

ক্রসফায়ার ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আদায় এবং শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মোস্তফা আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করেছেন। ঢাকার মহানগর হাকিম মোহাম্মদ দিদার হোসাইন মোস্তফার মামলাটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগের ব্যাপারে রাজশাহী রেঞ্জের এসপি বেলায়েত হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাসা থেকে তুলে নিয়ে মোস্তফাকে ক্রসফায়ার কিংবা নির্যাতন করার অভিযোগে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। বরং আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ধার নিয়েছেন মোস্তফা। সেই টাকা না দিয়ে আমাকে হয়রানি করছেন তিনি। সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’

রাজশাহী রেঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, এসপি বেলায়েতের বিরুদ্ধে আজ বুধবার ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তবে বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি জানেন না। তবে অফিশিয়াল কাগজপত্র পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।

গোলাম মোস্তফা তাঁর স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডিতে থাকেন। নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেওয়া মোস্তফা মামলার আরজিতে বলেন, এসপি বেলায়েতের সঙ্গে দুই বছর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে তাঁর পরিচয় হয়। পরে দুজনের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১১ আগস্ট এসপি বেলায়েত তাঁর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ নেন। এসপি সেই টাকা ব্যাংক চেকের মাধ্যমে গত ১৫ মার্চ শোধ করেন। পরদিন মোস্তফা ব্যাংক থেকে সেই টাকা তুলে নেন। এসপি বেলায়েত গত ৪ এপ্রিল মোস্তফার বাসায় ডিবির একজন কর্মকর্তাকে পাঠান। ওই কর্মকর্তার মাধ্যমে মোস্তফার বাবাকে এসপি বেলায়েত বলেন, ৫ লাখ টাকা দিতে। টাকা না দিলে তাঁর ছেলের (মোস্তফা) বিপদ হবে। এরপর গত ১০ এপ্রিল মোস্তফার বাবা ৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন এসপি বেলায়েতকে। তবে সেই টাকা যাতে এসপি বেলায়েত তুলতে না পারেন, সে জন্য চেকটি ‘ব্লক’ করেন। এসপি বেলায়েত সেই টাকা তুলতে পারেননি।

মামলায় মোস্তফা দাবি করছেন, গত ৮ আগস্ট বেলা ১১ টার দিকে এসপি বেলায়েতের নেতৃত্বে ডিবির ১৫ থেকে ১৬ জন কর্মকর্তা তাঁর ধানমন্ডির বাসায় আসেন। পরে তাঁকে বাসা থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাঁর কাছে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এসপি বেলায়েত। ওই টাকা না দিলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়।

মোস্তফা প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেন, ‘ডিবি কার্যালয়ে নেওয়ার পর পর আমাকে লোহার রড দিয়ে মারধর করেন এসপি বেলায়েত। টাকা না দিলে আমাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দেন তিনি।’

এসপি বেলায়েত প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোস্তফার সঙ্গে আমার পরিচয় এ বছরের ফেব্রুয়ারি অথবা মার্চে। কোথা থেকে আমার নম্বর সংগ্রহ করে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর্থিক সংকটের কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ ঋণ নেয়। তাঁর কাছ থেকে আমার ঋণ নেওয়ার প্রশ্নেই ওঠে না। তাঁর নামে অন্য মামলাও আছে। এগুলো আমি জানতাম না।’ মোস্তফাকে নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। আমি একটা লোককে মারধর করে পার পাব? মোস্তফা আমার টাকা নিয়েছেন, আমি টাকা দিয়েছি। সেই টাকা শোধ না করে তা আত্মসাৎ করার জন্য আমার নামে আদালতে মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়েছেন।’

ডিবির সহকারী কমিশনার মাহবুবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, এসপি বেলায়েত হোসেন স্যার মোস্তফা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৭ আগস্ট ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। একই সঙ্গে তিনি ডিবিতে একটি অভিযোগ দেন। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে ডিবির একটি দল গত ৮ আগস্ট মোস্তফার ধানমন্ডির বাসায় যান। সঙ্গে সেদিন ধানমন্ডি থানার পুলিশও ছিল। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোস্তফাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। তবে মোস্তফাকে কেউ মারধর করেছেন বলে তাঁর জানা নেই।

ধানমন্ডি থানার ওসি মো. ইকরাম আলী মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর থানায় বেলায়েত হোসেন নামের এক ব্যক্তি জিডি করেন। সেই জিডির তদন্ত করছেন থানার একজন কর্মকর্তা। তাঁর জানামতে, জিডির ভিত্তিতে কাউকে আটক করতে হলে আদালতের অনুমতি লাগে। তাঁর থানা মোস্তফা নামের কাউকে আটকও করেননি কিংবা জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।

মোস্তফার বাবা গোলাম মোহাম্মদ প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, এসপি বেলায়েত হোসেন সেদিন ডিবি পুলিশ এনে তাঁর সামনে তাঁর ছেলে মোস্তফাকে মারধর করেন। থানায় নিয়েও নির্যাতন করেন।

মোস্তফা দাবি করেন, তাঁর স্ত্রীর নম্বরে ফোন দিয়ে এসপি বেলায়েত সেদিন বারবার টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সেদিন সন্ধ্যায় ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে এসপি বেলায়েতের হাতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা তুলে দেন তাঁর স্ত্রী পায়েল। যার রেকর্ড তাঁদের হাতে আছে।

ডিবির সহকারী কমিশনার মাহবুবুল আলম জানান, সেদিন ডিবি অফিসে গিয়ে মোস্তফার স্ত্রী তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা দেন। সেই টাকা এসপি বেলায়েত হোসেনের পাওনা টাকা।

এসপি বেলায়েত ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেন। তিনি এটাকে তাঁর পাওনা টাকা বলে উল্লেখ করেন। এসপি বলেন, বাকি টাকা ১৩ আগস্ট দেওয়ার অঙ্গীকার করে মোস্তফা এখন আদালতে মিথ্যা মামলা করলেন।

প্রথম আলো

Exit mobile version