Site icon অবিশ্বাস

রংপুরে আত্মহত্যার দুই মাস পর হিন্দু স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের ভিডিও ফাঁস

রংপুরের বদরগঞ্জে সীমা রানী নামে এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার দুই মাস পর তাকে ধর্ষণের একটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ ও গোপন ভিডিও ধারণ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ওই ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে ওই ছাত্রীকে কয়েকদফায় অনৈতিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। লোক লজ্জার ভয়ে ও অপমানে আত্মহননের পথ বেছে নেয় নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা রানী।

 

গত ৫ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটে উপজেলার লোহানীপাড়া ইউনিয়নের কাঁচাবাড়ি হিন্দুপাড়ায়। সোমবার( ৮ মার্চ) দুপুরে ইউপি সদস্য ফজু মিয়া ভিডিও ফাঁসের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

অপকর্মের হোতা ঘটনার নায়ক হাফিজুর রহমানের হুমকি-ধমকিতে এখন নিহতের হতদরিদ্র মা ডলি রানী বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে বদরগঞ্জ থানা পুলিশ।

এলাকাবাসী ও ভিডিও চিত্রের সূত্রে জানা যায়, কাঁচাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সীমা। বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে একই এলাকার কাঁচাবাড়ি নয়াপাড়ার ইউনুস মেম্বারের লম্পট ছেলে হাফিজুর রহমানের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে হিন্দু পরিবারের মেয়ে সীমার ওপর। এক পর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে হাফিজুর শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন তার সঙ্গে। তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ভিডিও চিত্র তারই এক বন্ধুকে দিয়ে তিনি ধারণ করে রাখে। পরে সীমা হাফিজুর রহমানকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। মেয়েটি অন্য ধর্মের হওয়ায় হাফিজুর বিয়েতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে তিনি আবারও সীমাকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাপ দেন। এতে সীমা রাজি না হওয়ায় তাকে জানানো হয় সকল অপকর্মের গোপন ভিডিও চিত্র তার মোবাইল ফোনে ধারণ করা আছে।

এতে মেয়েটি হতভম্ভ হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ওই ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে কয়েক দফায় শারীরিক সম্পর্ক করেন লম্পট হাফিজুর।

ভিডিও ধারণ করে মেয়েটির প্রতিবেশী কালিপদ মাস্টারের ছেলে বিপুল চন্দ্র। বিপুলের মোবাইলের মেমোরিতে ভিডিও আছে বলে এলাকায় বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। কাঁচাবাড়ি বাজারে বিপুলের মোবাইল ফোন সেট কেড়ে নেন হাফিজুরের বন্ধু রাসেল, শহীদুল ও ফজু মেম্বার। পরে ওই গোপন চিত্র স্থানীয় মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি জানতে পেয়ে গত ৫ জানুয়ারি নিজ বাড়িতে বিষপান করে সীমা। ওই সময় তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

ময়না তদন্ত করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিন নিজ গ্রামের শ্মশান ঘাটে দাহ করা হয় সীমার মরদেহ।

সরেজমিনে গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সীমার মা ডলি রানী বাড়িতে নেই। গোটা বাড়ি ফাঁকা পড়ে আছে। আত্মহত্যার বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিবেশীর কাছে জানতে চাইলে এ নিয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বদরগঞ্জ থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ওই সময় থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। এখন নিহতের পরিবারের কেউ একজন অভিযোগ করলে আত্মহত্যার প্ররোচনায় মামলা নেওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি যেহেতু স্পর্শকাতর, এ জন্য গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।

বার্তা টোয়ান্টিফোর

Exit mobile version