Site icon অবিশ্বাস

রমনা কালীমন্দির দখল করে নিয়েছে বিএনপির ক্যাডাররা ‘গয়েশ্বরের নির্দেশ ছাড়া মন্দিরে কোনো পূজা সভা সমিতি হবে না’

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর রায়ের সমর্থক ছাত্রদল-যুবদল ক্যাডাররা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালীমন্দির দখল করে নিয়েছে। গতকাল পুলিশের সহায়তায় ছাত্রদল-যুবদলের ক্যাডাররা এ দখল প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী পূজা উদযাপন পরিষদ বিকাল ৫টায় মন্দির প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের মহানায়ক মাষ্টারদা সূর্যসেনের সহকর্মী বিনোদ বিহারী চৌধুরীর সংবর্ধনার আয়োজন করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট পর ছাত্রদল-যুবদলের বেশ কিছু ক্যাডার দলবলসহ অনুষ্ঠানস্থলে আসে। তারা নিজেদের গয়েশ্বর রায়ের সমর্থক বলে দাবি করে বলে, গয়েশ্বর বাবুর পারমিশন ছাড়া এখানে কোনো সভা করা যাবে না।আয়োজকরা জানান, তাদের এ কর্মসূচি আগে থেকেই নির্ধারিত। গয়েশ্বর বাবু চাইলে তিনিও অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। এ পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। চট্টগ্রাম থেকে আসা বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী ছাড়াও অনুষ্ঠানে মেজর জেনারেল (অব.) সি আর দত্ত (বীরউত্তম), অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আর এন দত্ত গুপ্ত ও কাজল দেবনাথ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রমেশ, অমলেন্দু, অপু, মানিক, তরুণ প্রমুখ ছাত্রদল-যুবদল ক্যাডাররা এ বলে হুমকি দেয় প্রয়োজনে ঢাকেশ্বরী মন্দিরও দখল করা হবে। গয়েশ্বরের নির্দেশ ছাড়া মন্দিরে কোনো পূজা, সভা-সমিতি অনুষ্ঠিত হবে না বলে তারা উচ্চস্বরে ঘোষণা দেয়। এ অবস্থায় বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়ার অনুষ্ঠানটি ঘন্টাখানেক বাক-বিতণ্ডা চলার মধ্যে দিয়েই পণ্ড হয়ে যায়। রমনা কালীমন্দির ও মা আনন্দময়ী আশ্রমের সভাপতি অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ দাঁড়িয়ে উপস্থিতদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সৃষ্ট ঘটনার ব্যাপারে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাইছি। সভা স্থগিত ঘোষণা করা হলো।’ পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। সভাশেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী বলেন, ‘অনৈক্যই আমাদের সর্বনাশের মূল। ভালো কিছু করতে হলে ঐক্য দরকার, সংহতি দরকার। একসঙ্গে চলা দরকার। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অহঙ্কার পতনের মূল।’ তিনি বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি না। সমাজনীতি করি। এখানে এসে রাজনীতির মধ্যে পড়ে গেলাম। অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ সৃষ্ট ঘটনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আজকের সভাটা ছিল মূলত বিনোদ বিহারী চৌধুরীর সংবর্ধনা। এছাড়া আজকের সভার পর এখানে মন্দিরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, পূর্তমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত হতো। কিন্তু অবস্থাতো আপনারা দেখলেন।’ তিনি বলেন, কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি এখানে সভা ডেকেছি। অন্য কারোতো এখানে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। প্রসঙ্গত, পুরাকীর্তি সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক রমনা কালীমন্দির প্রায় সাড়ে ৮০০ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত সাধক গোপালগিরি বিশ্বখ্যাত হিমালয় তীর্থ চন্দ্রী নারায়ণ থেকে এসে এ মন্দিরের গোড়াপত্তন করেন। এক সময় এ মন্দিরের নাম ছিল কৃপাসিদ্ধি আখড়া। তারপর বিভিন্ন সাধু সন্ত এ মন্দিরের সংস্থার করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকবাহিনী রাত সাড়ে ১২টায় এ মন্দির আক্রমণ করে মন্দিরে অবস্থানরত বাসিন্দাদের নির্বিচারে হত্যা করে। ডিনামাইট ও কামানের গোলা দিয়ে মন্দিরটি উড়িয়ে দেয়। এ নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মন্দিরের সেবাইত পরমানন্দ গিরি মহারাজসহ ৮৫ জন নর-নারী শিশু নিহত হন। কিন্তু স্বাধীনতার ৩০ বছরেও এ মন্দির নির্মাণ সম্ভব হয়নি। নানা সময় মন্দির নির্মাণের উদ্যেগ নেওয়া হলেও সরকারি বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। এরই এক পর্যায়ে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম ঘটপূজার মাধ্যমে দুর্গোৎসব ও প্রতিমার মাধ্যমে কালীপূজা সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে বাসন্তী পূজা করা নিয়ে অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ ও এডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন কমিটির সঙ্গে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক গয়েশ্বর রায়ের বিরোধ তৈরি হয়। এ বিরোধের জের ধরেই গতকালের দখল প্রক্রিয়া।’

ভোরের কাগজ, ১১ মে ২০০২

Exit mobile version