রাজধানীর ডেমরায় বাসচাপায় ইবনে তাহছিম ইরাম (১৮) নামে স্থানীয় এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। এ সময় তার মাথার একপাশ থেঁতলে গিয়ে মগজ বেরিয়ে যায়।
৫ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে ডেমরা-রামপুরা সড়কের মোস্তমাঝির মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত ইরাম ডেমরার আমুলিয়া পূর্ব পাড়ার মো. দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। ইরাম ডেমরার গোলাম মোস্তফা স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে নিহত ইরামের লাশ তার পরিবারের লোকজন উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় রামপুরা থেকে ট্রাফিক পুলিশ রমজান পরিবহনের ওই বাসটিসহ (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৩৬৮৭) চালক মো. শামীম ও হেলপার মুন্না মিয়াকে আটক করেছে।
তবে এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও কলেজ শিক্ষার্থীরা ডেমরার আমুলিয়া, স্টাফ কোয়ার্টার ও সুলতানা কামাল সেতু এলাকায় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর, বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে রাখে।
এতে ডেমরা-রামপুরা ও ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গ্যারেজে গিয়েও বেশ কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে। এ সময় ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নিহত ইরাম দুপুরে খেলা শেষে সাইকেলযোগে মোস্তমাঝির মোড় হয়ে বাড়ি ফিড়ছিল। এ সময় স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ছেড়ে আসা রামপুরাগামী রমজান পরিবহনের ওই বাসটি ইরামকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে রামপুরায় গিয়ে বাসটিসহ হেলপার ও চালক আটক হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামপুরা ট্রাফিক জোনের টিআই বিপ্লব ভৌমিক জানান, কলেজছাত্র ইরামের নিহতের খবর পেয়ে রামপুরা জোনের ট্রাফিক পুলিশ বাসসহ চালক ও হেলপারকে আটক করে। তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার করবে প্রশাসন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা রামপুরা সড়কের আমুলিয়ায় গাছের গুঁড়ি ও ঢালাই পাইপ ফেলে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। স্থানীয় সাংবাদিকদেরও ছবি তুলতে দিচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন হাতে নিলেই তারা উত্তেজিত হয়ে ওঠছে।
এদিকে মীরপাড়া এলাকায় গ্যারেজে রাখা অন্তত ৩৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া এলাকার অন্যান্য সব গ্যারেজে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বাস ভাঙচুর করে।
বিক্ষোভের সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা যুগান্তরকে জানান, ডেমরার যাত্রীবাহী বাসগুলোর চালক ও হেলপাররা সব অদক্ষ ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক। তার নেশাগ্রস্ত হয়ে সড়কে অনেক বেপরোয়া হয়ে গাড়ি চালালেও পুলিশ কিছু বলে না।
ডেমরা থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশদের মাসোহারা দিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্করা গাড়ি চালায় বলে ডেমরার সড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা হচ্ছেই। প্রশাসন সঠিক ব্যবস্থা নিলে এমন হতো না। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুই দিনের বিক্ষোভ ঘোষণা করে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় সব গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডেমরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রথমে ভাঙচুর করলেও পুলিশের উপস্থিতির পর তারা রাস্তায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। নিহতের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া চালক ও হেলপার আটক রয়েছে।