Site icon অবিশ্বাস

রাজশাহীর চারঘাটে মেয়েকে হত্যার অভিযোগ নিয়ে থানায় মা, উল্টো হাজতে ঢোকানোর হুমকি ওসির

মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন এক অসহায় মা। কিন্তু মামলা না নিয়ে উল্টো ওই মাকেই হাজতে ঢোকানোর হুমকি দিয়েছেন থানার ওসি। ঘটনাটি চারঘাট উপজেলার তাতারপুর এলাকার।

 

এ ঘটনায় পুলিশের আইজি ও রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ১৫ বছর আগে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার তাতারপুর এলাকার মোস্তফা-পারুল দম্পতি তাদের মেয়ে আরিফার সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন একই এলাকার আকবর আলীর ছেলে শাহাবুল ওরফে সবরের। বিয়ের পর থেকেই আরিফার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন স্বামী শাহাবুল।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ আগস্ট সকালে আরিফা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে শাহাবুল জানিয়েছেন। পরে খবর পেয়ে চারঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে প্রেরণ করে। ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিনই দুপুর আড়াইটার দিকে আরিফার লাশ তার শশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তড়িঘড়ি করে তার লাশ বিকেল ৫টার মধ্যেই দাফন করা হয়।

এতে মামলার বাদী ও আরিফার মা পারুল বেগম অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই শাহাবুল, তার বাবা আকবর, তার দুই ভাই ও বোনেরা মিলে আরিফার ঝুলন্ত লাশ নামিয়েছেন। খবর পেয়ে আমি আমার মেয়েকে দেখতে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।

এরপর দেখতে পাই, আমার মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন- বুকে, নাকে এবং কানে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে। এতে আমার ধারণা, আমার মেয়েকে তারা আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে অথবা তারা নিজেরাই তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল।

তিনি আরো বলেন, আমার মেয়ে জামাই শাহাবুল এলাকার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী ও ভয়ংকর প্রকৃতির মানুষ। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললেই তাকে শারীরিক নির্যাতনসহ মাদক দিয়ে পুলিশ ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া এলাকায় তার রয়েছে একক আধিপত্য। তার নামে ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে না।

পারুল বেগম আরো বলেন, আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে এই কথা বলার জন্য শাহাবুল তার অন্যান্য সহযোগী আবুল, মাজেদুল, কালাম, কফিল, মিলন, ইউনুস ও মকসেদুলকে নিয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করে। ওই সময় আমি ঘরের ভিতর থেকে দরজা আটকিয়ে আমি প্রাণে রক্ষা পাই। পরে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তিনি বলেন, আমার মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় আমি চারঘাট থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার ওসি আমাকে বলেন, আপনার মেয়ে মারা গেছে আপনার তো গড়াগড়ি করার কথা। আপনি থানায় অভিযোগ করতে এসেছেন কেন। এরপর ওসি মামলা না নিয়ে আমাকে থানা হাজতে ঢোকানোর হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমি চরম নিরাপত্তায় ভুগছি। বর্তমানে রাজশাহী শহরে নিকট আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত শাহাবুলসহ জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মাদক ব্যবসায়ী সাহাবুলের বিষয়ে জানতে চাইলে চারঘাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সমিত কুমার কুন্ডু জানান, তাতারপুর মাধক অধ্যাষিত এলাকা। শাহাবুল এক কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী এই বিষয়ে আমি অবগত। সাহাবুলের মাদকের ব্যবসা চলমান ও তার বিরুদ্ধে দুইটি মাদক মামলার ওয়ারেন্ট থানা সত্ত্বেও তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ওয়ারেন্ট অফিসার এসআই ইকবালের সাথে যোগাযোগ করুন বলেই ফোন কেটে দেন।

এসআই ইকবাল জানান, সাহাবুলের বিরুদ্ধে দুইটি ওয়ারেন্ট আছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া অন্য কথার উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।

এদিকে, ভুক্তভোগী পারুল তার মেয়ে আরিফার মৃত্যুর বিষয়ে মুখ খুলেই মহাবিপদে পড়েছেন। অস্ত্র নিয়ে তাকে এখানে সেখানে খুঁজছেন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী শাহাবুল। প্রাণ বাঁচাতে গত দুইদিন আগে তিনি রাজশাহী নগরীর একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান পারুল।

সময় নিউজ টিভি

Exit mobile version