বিভিন্ন জেলার নির্যাতিত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ প্রতিদিন লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। গত ১০ দিন এসব জেলার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অন্তত দুই হাজার মানুষ বৈধ ও অবৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। সীমান্তের বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিভিন্নভাবে অপমানিত ও লাঞ্চিত হওয়া এসব পরিবার বা মানুষ তাদের নিজ ভূমি ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমালেও তাদের কারও কারও ভাগ্যে জুটছে কারাভোগ। এ অবস্থায় ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অনেকেই। অপরদিকে সীমান্তের একটি দালালচক্র অবৈধভাবে মানুষজনকে পার করে কামিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ১ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় এবং চারদলীয় জোট জয়ী হবার পরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর লাঞ্চনা ও নির্যাতন শুরু হয়। এসবের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন জীবন রক্ষার তাগিদে পরিবারপরিজন নিয়ে ভারতে পাড়ি জমাতে শুরু করে। লালমনিরহাট জেলার মোগলহাট, বুড়িমারী মুগলীবাড়ি সীমান্ত ঘুরে ও খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনই এসব সীমান্ত দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে মানুষ যাচ্ছে ভারতে। মোগলহাট সীমান্তের কাষ্টমস ও ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ওই সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বেশকিছু পরিবার বৈধভাবে যাচ্ছে। গত শুক্রবার সেখানে কথা হয় টাঙ্গাইলের দু’জনের সঙ্গে। তাঁরা পরিবার পরিজন নিয়ে পূজা করার কথা বলে কুচবিহার যাবার কথা বললেও তাঁরা আর ফিরে আসবে কিনা অনিশ্চিত! মোগলহাট কাস্টমস অফিসারের সামনে কথা হয় টাঙ্গাইল মির্জাপুরের এক পরিবারের সঙ্গে। তাঁরা জানান, নির্বাচনের পরদিন থেকেই এলাকার বিএনপি কর্মী-সমর্থকরা তাঁদের ওপর নানা ধরণের ভয়ভীতি ও নির্যাতন শুরু করে। একই ধরনের কথা বলে অন্য একজন। লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাছে মুগলীবাড়ি গ্রাম বর্তমানে পরিণত হয়েছে সংখ্যালঘুদের ভারত যাবার প্রধান রুটে। এখানে অবৈধ পথে পারাপারকে বলা হয় ট্যাংরা পারাপার। এখানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার করাটিয়া, দেলদুয়ার সদরের সংখ্যালঘুরা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ভারত যাচ্ছে। জানা গেছে, দেলদুয়ার গ্রামের এক সংখ্যালঘু পরিবারের দু’মেয়েকে তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। গত ৫ অক্টোবর একটি দলের কিছু কর্মী একটি পরিবারের কাছে ৭ দিনের মধ্যে ১ লাখ টাকা দেয়ার দাবি করে। টাকা না দিলে দু’ মেয়েকে তারা তুলে নেয়ার হুমকি দেয়। যে কারণে তারা ৭ দিনের আগেই বাড়িঘর ছেড়ে চলে এসেছে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্তে— ও স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বালারহাট, শিমুলবাড়ি ও নাগেশ্বরী উপজেলার গঙ্গারহাট সীমান্তে এসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই জড়ো হয় বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু পরিবার। লোক পাচারকারী দালালদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ পর্যন্ত যারা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে তাদের অধিকাংশই টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ভোলাসহ বিভিন্ন জেলার।
দৈনিক জনকন্ঠ, ১৮ অক্টোবর ২০০১