Site icon অবিশ্বাস

সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৮০ ভাগ খবর ভিত্তিহীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু বিএনপি নয় আওয়ামী লীগ নির্যাতন করছে ঃ মান্নান ভূঁইয়া

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভুঁইয়া এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ব্যাপারে পত্রিকা গুলি অতিরঞ্জিত খবর ছাপছে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ৮০/৯০ ভাগ ভিত্তিহীন। খবরের কাগজের রিপোর্টারের সাথে ডিসি এসপিদের পাঠানো রিপোর্টের কোন মিল নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের নিমচন্দ্র ভৌমিক তার সাথে সাক্ষাৎকালে পত্রিকায় অতিরঞ্জিতখবর প্রকাশ হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব কল্পিত খবরের পেছনে একটি মহল সক্রিয়। তারা এ থেকে ফায়দা লুটতে চায়। কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনার কথা স্বীকার করে দুই মন্ত্রী হিন্দুদের উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে পূজা উদযাপনের আহ্বান জানান। হিন্দুদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও পূজামণ্ডপ ইতোমধ্যেই পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তারা জানান। দুই মন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করছি। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে দুই মন্ত্রী ছাড়াও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাংসদ জহিরুদ্দিন স্বপন, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব ড. আকবর আলী খান, পুলিশের আইজি মোহাম্মদ নুরুল হুদাসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক ইত্তেফাক-এ গতকাল সোমবার কোটালীপাড়ায় আশ্রয় নেয়া সংখ্যালঘুদের সাহায্যের আশায় বসে থাকার যে ছবিটি ছাপা হয়েছে তা সাজানো বলে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া জনকণ্ঠের একটি রিপোর্টকে কাল্পনিক মন্তব্য করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইত্তেফাকে প্রকাশিত ছবিটির সর্বাগ্রে যে মহিলা তার নাম কমলা রানী। গতকাল ওই এলাকায় যাওয়ার পর সে তার কাছে প্রকাশ করেছে যে তাকে একজন ডাক্তার এখানে নিয়ে এসেছিল। সে সাহায্যের আশায় আসেনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতকাল তিনি গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, কোটালীপাড়া ও রামশীল এলাকা ঘুরে এসেছেন। তার সাথে ঢাকা থেকে সাংবাদিকরাও গিয়েছিলেন কিন্তু তাকে প্রশ্ন করলে তিনি মাত্র ২টি পত্রিকার সাংবাদিকদের কথা বলেন। তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং রামশীলে নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের আশ্রয় গ্রহণের খবরের কোন সত্যতা পাননি। তিনি সুধী সমাবেশ করে জানতে পারেন গৌরনদী এলাকার সাবেক চিপ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর সন্ত্রাসীরা রামশীলে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা গৌরনদী থেকে পালিয়ে আসার সময় স্থানীয় সংখ্যালঘুদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালায়। তারা চলে আসার সময় সংখ্যালঘুদের বলে আসে, এলাকায় রায়ট হবে। তাই তাদের সাথে ভয়ে দু একটি পরিবার রামশীলে এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে গতকাল রামশীলে তিনি কাউকে খুঁজে পাননি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আগৈলঝাড়া এলাকার সাবেক মন্ত্রী সুনীল গুপ্তও সুধী সমাবেশে একই কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বরিশাল এলাকার স্থানীয় সাংবাদিকরা তাকে জানিয়েছেন পত্রিকায় যে সব খবর ছাপা হয় তা বরিশাল এলাকার কোন সাংবাদিক পাঠান না। ঢাকা অফিস থেকে এসব আজগুবি ও ভৌতিক খবর তৈরি করে ছাপানো হয়। বরিশালের সাংবাদিকরা এ জন্য তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে সব সন্ত্রাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে তার মধ্যে তিনি রাজনৈতিক গন্ধ পেয়েছেন। একটি সন্ত্রাসীদের টাকা দিয়ে সন্ত্রাস করাচ্ছে। বিএনপির সাথে যোগাযোগ আছে এমন সব লোকজনকে দিয়েও সন্ত্রাস করানো হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া বলেন গত ৫ বছরে আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, নিহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। থানা মামলা নেয়নি, বিচার হয়নি। তাই আমাদের নেতা কর্মীদের মধ্যে কিছু ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক। একারণেই আমরা বিজয় মিছিল বা উল্লাস করিনি। তারপরেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। শুধু বিএনপি আক্রমণ করেনি, আওয়ামী লীগও আক্রমণ করেছে। আমার এলাকায়ও বিএনপির একজন নিহত হয়েছে; কিন্তু আমরা সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছি। দুই মন্ত্রী সমবেতভাবে বলেন, আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছি। সন্ত্রাসী যেই হোক তাকে গ্রেফতার করা হবে। কেউ বাদি না হলেও পুলিশ নিজে বাদি হয়ে মামলা করবে। তারা সারা দেশের হিন্দুদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মাধ্যমে দুর্গাপূজা করার আহ্বান জানান। গতকাল সাংবাদিকদের একটি প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, ভারতে সংখ্যালঘুদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার কাছে কোন তথ্য নেই। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব ড. আকবর আলী খান বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ৮০/৯০ ভাগের সঙ্গে ডিসি এসপিদের পাঠানো রিপোর্টের কোন মিল নেই। পত্রিকার অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন সংখ্যালঘুদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সংবাদপত্রের অধিকাংশ রিপোর্ট ভিত্তিহীন।

সংবাদ, ১৬ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version