সনাতন ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে করা মামলায় তাকে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ময়নুল হোসেন আবির নামে ওই শিক্ষার্থীর নামে খোলা এক ফেসবুক আইডি থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী এবং সনাতন ধর্মের দেবী দুর্গাকে নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার কোতয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেকুজ্জামান বাদী হয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ২৮(১) এবং ৩১(১) ধারায় তার নামে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা এলাকার আমির হোসেনের ছেলে ময়নুল হোসেন (২৩) গত ১৯ মে রাতে ফেসবুক স্ট্যাটাসে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও দেবী দুর্গা সম্পর্কে কটূক্তি করেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাকে গত ২০ মে মামলার বাদী এসআই খালেকুজ্জামান সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) তদন্তাধীন আছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৮মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী জয়দেব চন্দ্র শীল ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘ভয়েস অব আমেরিকার’ ভেরিফায়েড পেজে ইসলাম ধর্ম এবং মহানবী (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করে। এর পর ১৯ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ‘শ্যামল চন্দ দাস’ নামের ফেসবুক আইডির একটি পোস্টের স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ময়নুল হোসেন আবির ওরফে মইনুল ইসলাম আবিরের আইডি থেকে একটি গ্রুপে হিন্দু ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে। যদিও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে– আশিকুর রহমান রাব্বানী নামে একজনকে করা পোস্টে অভিযুক্ত ময়নুল এই অবমাননাকর মন্তব্যটি করেন।
এ স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে ময়নুল তার আইডি থেকে অন্য একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন যে এই মন্তব্যটি তিনি করেননি। তার দাবি অনুযায়ী, ‘কেউ আমার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে এমন একটি মন্তব্য করে আমাকে ফাঁসাতে চাচ্ছে।’
একই পোস্টে ময়নুল দাবি করেন যে, তাকে ফাঁসিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক সংর্ঘষ তৈরির জন্যই একটি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে তার নামে অ্যাকাউন্ট খুলে তা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ওই রাতেই ৩০-৪০ জন অজ্ঞাতনামা লোক ময়নুলের খোঁজে তার বাসায় যায় ।
এ ঘটনার পর সোমবার (২০ মে) ময়নুল কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানায় নিরাপত্তা চেয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করতে যান। তবে পুলিশ জানায়, তার পক্ষ থেকে কোনও জিডি নথিভুক্ত হয়নি। এ জিডি করতে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম হানিফ বলেন, ‘আমিসহ কয়েকজন তাকে নিয়ে তার নিরাপত্তার জন্য জিডি করতে যাই। একজন ওসি এবং এসআই তার সব কথা শুনে এবং মোবাইলের সবকিছু দেখে তাকে বলেন, এএসপি আবদুল্লাহ আল মামুন আপনাদের জিডির কপি দেবেন। পরে জিডির কপি আর দেওয়া হয়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, “অধিকতর তদন্তের জন্য তাকে (ময়নুলকে) একদিন আমাদের জিম্মায় থাকতে হবে।” ’
পরে মামলার নথি অনুযায়ী ২০ মে রাতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। তবে তাকে কোন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য জানায়নি পুলিশ। এ ব্যাপারে মামলার বাদী এসআই খালেকুজ্জামান তার সিনিয়র অফিসার থানায় উপস্থিত না থাকায় কোনও ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি। ময়নুলের সঙ্গে তার মেসে থাকা অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কমেন্ট ভাইরাল হওয়ার পর ময়নুল আর সেই বাসায় আসেননি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা জানান, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় মো. ময়নুল হোসেনকে আটক করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
ময়নুল হোসেন আবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মো. কামালউদ্দিন জানান, ‘ময়নুলের ব্যাপারে যে অভিযোগ তা বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কিছু নয়। তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে। তবে শিক্ষার্থী হিসেবে তাকে আইনের মধ্যে থেকে যতটুকু সহযোগিতা করার তা বিশ্ববিদ্যালয় করবে। সে দোষী হলে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তসাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’