Site icon অবিশ্বাস

সহিংসতায় পাঁচ জেলায় পাঁচজন নিহত। সংখ্যালঘুরা আতংকে

নির্বাচনোত্তর সহিংসতা থামছে না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গতকাল শনিবার ও এর আগের রাতে ফেনী, রাজবাড়ি, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর ও নাটোরে ৫ জন নিহত হয়েছে। শাহজাদপুরে মঙ্গলবার বিজয় মিছিলের সময় দু’দলের সংঘর্ষে গুরুতর আহত খোকন মণ্ডল (৩০) গতকাল হাসপাতালে মারা গেছে। পটুয়াখালীর বাউফলের মন্দির ভাংচুর ও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। এসব সহিংসতায় বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় চরম আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে। লালপুর (নাটোর) গতকাল দুপুরে উপজেলার আড়বাব হিন্দু পাড়া গ্রামে বিএনপি সমর্থকরা সরানন্দ (১৮) ও রতনকে (২০) মারধর করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। ঘটনার দুঘন্টা পর পুলিশ ওই গ্রামের একটি আখক্ষেত থেকে সুমনের লাশ উদ্ধার করে। সে গোসাইপুর গ্রামের রমজান আলীর পুত্র। গুরুতর আহত আশরাফকে(১৮) লালপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরদিকে বিএনপি সমর্থকরা দুয়ারিয়া, হোসেনপুর ও গোপালপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের কাছে চাঁদা দাবি করে হুমকি দিচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলার সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে গেছে। তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ, কুসুম্বি, শাহজাদপুর উপজেলার নরিনা, সদর উপজেলার গুপিরপাড়া, বাঐতারা গ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে ভাংচুর চালানো হয়েছে। এসব এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ও বড়বিঘাই ইউনিয়নে গতকাল স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থক রমেশ পাল (৩০) ও সুধীরকে (৪৮) বিএনপির নামধারী সদস্যরা প্রকাশ্যে মারধর করেছে। বাউফলের দাসপাড়া এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের একটি মন্দির বিএনপির কর্মীরা ভাংচুর করেছে। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিমাই চন্দ্র পাল ও বাউফল আসনের নবনির্বাচিত বিএনপির সাংসদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বাউফল থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। নান্দাইল উপজেলার দাসপাড়া গ্রামের পবিত্র কুমার রায়ের বাড়িতে একদল সন্ত্রাসী দিনে-দুপুরে হামলা ও লুটপাট করে। ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আগৈলঝাড়া বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের পরিবারের ওপর হামলা হয়েছে নেত্রকোনা জেলার কালিয়াজুরি উপজেলার চাকুয়া ইউনিয়নের লেপসিয়া বাজারে গতকাল সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েকটি দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান রহমতউল্লাহ জড়িত বলে জানা যায়। বাজারে আতংক বিরাজ করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় গনফোরামের উদ্বেগ গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জহিরুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক নির্বাচনের পর পরই সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের ওপর সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রশাসন ও বিজয়ী দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ববৃন্দকে এ ব্যাপারে জরুরী ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান। একই সঙ্গে নেতৃত্ববৃন্দ বিজয়ী দলকে প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।

যুগান্তর, ৭ অক্টোবর ২০০১

Exit mobile version