সিলেট শহরে আবারও জোড়াখুনের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ঘটে যাওয়া ৫টি জোড়াখুনের ঘটনার মতো এ খুনের ঘাতকরাও অজ্ঞাত। শহরের শিবগঞ্জ সেনপাড়ার তদানীন্তন জমিদার কালীপ্রসন্ন রায়ের ‘বীণা’ ভবনে এ ঘটনা ঘটে। ওই ভবনে থাকা কোটিপতি বিধবা বীণাপাণি দেব রায় (৭০) ও তার মেয়ে ঊষা রাণী দেব রায়কে (৫০) ঘাতকরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। যে কক্ষে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে সে কক্ষে আর কেউ থাকত না। খুন হওয়া ঊষা রাণী দেবের স্বামী থাকলেও গত ১০ বছর ধরে তারা সহাবস্থান করছেন না। একমাত্র পুত্র প্রীতিম শেখর দীপ্ত এবার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সে তার বাবা কলেজশিক্ষক প্রশান্ত শেখর দের সঙ্গে থাকত। জোড়াখুনের ঘটনার আসল রহস্য গতকাল পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি। কেউ নেই ঃ সম্পদের দিক দিয়ে কোটিপতি হলেও খুন হওয়া মা-মেয়ে বীণা ও ঊষার আপনজন বলে যেন কেউ নেই। লাশ উদ্ধার, ময়না তদন্ত, আবার বাসায় ফেরত নেয়ার পর এমনকি মা-মেয়েকে একসঙ্গে চিতায় তোলার পরও কাউকে অশ্রু বিসর্জন দিতে দেখা যায়নি, একমাত্র দীপ্ত ছাড়া। দীপ্ত শুধু কাঁদেনি, তার মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ আর প্রতিশোধের ছাপ প্রত্যক্ষ করা গেছে। অনেক কিছুরই নীরব দর্শক যেন সে। পাড়াপড়শী, আত্মীয় সম্পর্কীয়রা সেখানে ভিড় করলেও সবাই কথা বলতে নারাজ। এ নিয়ে সিলেটে ৫টি জোড়াখুনের ঘটনা ঘটল। ‘বীণা’ ভবনের নিচতলায় একপাশে খুন হওয়া বীণা ও ঊষা থাকতেন, পাশে থাকেন বিধান নামের এক টেলিফোন ব্যবসায়ী। তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে তিনি শিবগঞ্জ বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে যান। ফেরেন রাত ১১টায়। ফিরে এসে দেখেন বাসার মূল গেট ও বারান্দার গ্রিল খোলা। অন্যদিন এগুলো বন্ধ থাকত। বিধানের স্ত্রী ইতি রাণী দেব বলেন, আমিও বাসায় ছিলাম না। বাবার বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম। ফিরেছি রাত ৯টার দিকে। এই সময়ের মধ্যে পাশের কক্ষে কোন শব্দ শুনতে পাইনি এবং তাদের কাউকে দেখিওনি। তবে মামলার এজাহারে দীপ্ত দাবি করেছে, ওই মহিলা পাশের কক্ষের আওয়াজ শুনেছেন। দ্বিতল ভবনের উপরতলায় থাকেন এক ব্যাংকার দম্পতি। গতকাল তারা ব্যাংকে থাকায় তাদের পাওয়া যায়নি। শুধু কাজের মহিলা ও তাদের ছোট্ট শিশুটি বাসায় ছিল। পুলিশ ধারণা করছে, সন্ধ্যারাতেই মা-মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। রাত ১১টার দিকে পাশের কক্ষের বিধান এসে বীণা ও ঊষার কক্ষের দরজায় নক করেন। কোন সাড়াশব্দ না পাওয়ায় তিনি আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানান। লোকজন এসে ডাকাডাকি ও দরজায় ধাক্কাধাক্কির পর রাত আড়াইটায় দরজা ভাঙার পর জবাই করা অবস্থায় বীণা ও ঊষার লাশ উদ্ধার করা হয়। বীণাকে জবাই করে এবং ঊষাকে মাথায় কুপিয়ে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করে ঘাতকরা। বীণাকে ড্রয়িং রুমে খুন করার পর লাশ টেনে নিয়ে ডাইনিং রুমে মেয়ে ঊষার লাশের পাশে ঘাতকরা ফেলে রেখে যায় বলে পুলিশের ধারণা। বাসার ভেতরের আলমারির মালামাল উলটপালট ও বাসার জিনিসপত্র ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় দেখা গেলেও এটা ডাকাতদের কাণ্ড বলে কেউই মেনে নিচ্ছেন না। সবার ধারণা এটা পরিকল্পিত খুন। পুলিশ গতকাল সকাল ৭টায় লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
যুগান্তর, ১৩ জুন ২০০২