বড় ধরনের কোন সহিংস ঘটনা ছাড়াই গতকাল সোমবার মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের নবগঠিত দু’টি পৌরসভা সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই পৌরসভা নির্বাচন। দু’টি পৌরসভার মধ্যে সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগ অংশ নিলেও মিরসরাইয়ে চেয়ারম্যান পদে তাদের কোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেননি। সীতাকুণ্ড পৌরসভায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ভোট গ্রহণ শুরুর আগ থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ক্ষমতাসীন জোট প্রার্থীদের সমর্থক শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা বাড়ি বাড়ি হামলা চালায় এবং ভোটারদের মারধর করে। এতে অন্তত ৭ জন মারাত্মকভাবে আহত হয়। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক তার দলবল নিয়ে হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানালেও কেউ ভোট দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নায়েক (অব.) শফিউল আলম হিন্দুদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ করলেও জোটপ্রার্থী আলহাজ আবুল কালাম আজাদ হামলার ঘটনা অস্বীকার করেন। সীতাকুণ্ড পৌরসভা নির্বাচনের বিভিন্ন কেন্দ্র সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ̧গুড়িগুড়ি বৃষ্টির মধ্যে কোথাও ভোটারদের লম্বা লাইন আবার কোথাও ফাঁকা ভোটকেন্দ্র। ভোটাররাও বলেছেন, তাদের ওপর ভয়ভীতি হুমকির কথা। দত্তবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে আসা তপন শীল (ভোটার নম্বর ৪৬৩), ধনা রঞ্জন জলদাশ (৪০৫) জানান, রাতে ভোট কেন্দ্রে না আসার জন্য তাদের হুমকি দেয়া হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে দেখা যায়, কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোঃ মহিউদ্দিন জানান, কেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে সীতাকুণ্ড কলেজ কেন্দ্রে। কেন্দ্রের ভেতরে পুরুষ ভোটারদের দেখা গেলেও মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। কেন্দ্রের পাশেই দেখা গেছে শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডারদের অবস্থান। এই কেন্দ্রের ২৩৮০ জন ভোটারের অধিকাংশই হচ্ছে হিন্দু। ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে আসা পদ্ম চৌধুরী (২৮), রীতা আচার্য (৩২) এই প্রতিবেদকের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে। রনজিত চক্রবর্তী (৭০), শম্ভুনাথ চক্রবর্তীসহ (৬০) প্রেমতলা এলাকার লোকজন জানায়, হাতে নীল রঙের ব্যাজ পরা ৪০/৫০ জনের সশস্ত্র একটি দল তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালিয়েছে। মহিলাদের মারধর করেছে। এমনকি এরপরও যারা ভোটকেন্দ্রে গেছে তাদের শাড়ি টেনে খুলে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় এ সময় শেফালী রানী শীলের (৩২) পা ভেঙে যায়, সুভাষ শর্মা (৪৫) সহ আরও অন্তত পাঁচজনের মাথা ফেটে যায়। সীতাকুণ্ড উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ১১টা পর্যন্ত অবশ্য ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই নগণ্য। তবে প্রচুর জাল ভোট পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ মহিউদ্দিনকে এ সময় স্কুলের ওই বুথে ভোট গ্রহণ করতে দেখা গেলেও বাইরে কোন ভোটারকে দেখা যায়নি। স্কুলের ওই বুথে ভোটার ছিল ৩৯৫ জন। আলম শফি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের লোকজন অবশ্য জানান, তাদের এখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোট দিতে এসেছেন। তবে ভোর ৫টার দিকে আশপাশ এলাকায় চারটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতংক সৃষ্টি করা হয়। হিন্দুদের ভোটদানে বাধা দেয়ার খবর শুনে বেলা ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকসহ (রাজস্ব) সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিরাট বহর নিয়ে হিন্দুপাড়ায় যান। তারা তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ভোট দিতে যাওয়ার অনুরোধ জানালেও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভোটকেন্দ্রে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
যুগান্তর, ১৪ মে ২০০২