Site icon অবিশ্বাস

সৌদি নারীদের অধিকার প্রাপ্তির সময়রেখা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব কতৃপক্ষ তাদের দেশের নারীদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকার অবমুক্ত করছে। তারা নারী-পুরুষের অধিকারে সমতা আনছে এভাবে বলা যায় না। বরং বলা যায় তারা নারীদের এক পা এগোতে দিলে পরের পা আগাতে হয়তো আরও দশ-পনেরো বছর সময় নেয়। নারী-পুরুষ সমতাকরণে তাদের গৃহীত পদক্ষেপগুলো এতো ধীরগতিতে চলছে যেখানে বাকী বিশ্ব অন্তত দু্ই শতাব্দী এগিয়ে গেছে।

আমরা এখানে সৌদি নারী অধিকার সমতাকরণের একটা সময় পরিক্রমা তুলে ধরছি।

১৯৫৫
নারীদের জন্য প্রথম স্কুল

সৌদি নারীদের সমতাকরণের প্রথম পদক্ষেপ নেয়ার ঘটনা ঘটেছিলো ১৯৫৫ সালে। মেয়েদের জন্য সৌদি আরবে প্রথমবারের মত স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। জেদ্দায় স্থাপিত দান আল হানান নামক স্কুলে সেই বছরে ৩০ জন নারীর সৌভাগ্য হয়েছিলো শিক্ষা গ্রহণ করার। স্কুলটি স্থাপন করেছিলেন সেই সময়ের সৌদি রানী ইফফাত আল থুনাইয়ান আল সৌদ।

১৯৭০
নারীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার পদক্ষেপ

১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার কোন সুযোগ ছিলো না সৌদি নারীদের। প্রিন্সেস নৌরাহ বিনতে আবদুল রহমান ইউনিভার্সিটি ছিলো সৌদি নারীদের উচ্চ শিক্ষার প্রথম ধাপ। স্কুল প্রতিষ্ঠার পর ১৫ বছর লেগে গেলো একটা ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করতে!

২০০১
প্রথমবারের মত নাগরিকত্ব লাভ!

নতুন শতাব্দীতে এসে সৌদি নারীরা প্রথমবারের মত সৌদি আরবের স্বীকৃত নাগরিকত্ব পেলেন! ভেবে হয়তো অবাক হবেন, এবারই নারীদেরকে প্রথমবারের মত রাষ্ট্র কতৃক আইডি কার্ড দেয়া হয়। এর আগে নারীদের অস্তিত্ব হয়তো স্বীকারই করতো না সৌদি আরব!

২০০৫
জোরপূর্বক বিবাহ নিষিদ্ধ সৌদি আরবে

২০০৫ সালে সরকারিভাবে জোরপূর্বক বিবাহ নিষিদ্ধ হয় সৌদি আরবে। কাগজ-কলমে বিবাহ প্রথা চালু হয়। যদিও সরকারিভাবে নিষিদ্ধ, কিন্তু সরকারিভাবে এই আইনের যথাযথ কোন প্রয়োগ সৌদি আরবে নেই। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে এখনও সৌদি আরবে এই প্রথায় বিবাহ ব্যবস্থা চালু আছে।

২০০৯
প্রথমবারের মত কোন নারীর মন্ত্রিত্ব লাভ

প্রথমবারের কোন নারী সৌদি আরবের সরকারিভাবে মন্ত্রিত্ব লাভ করে। নোরা আল ফায়েজ নারীদের জন্য উপ-শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন

২০১২
নারীদের খেলাধূলায় অংশগ্রহণ

২০১২ সালে সৌদি আরব তাদের নারীদের প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে সারাহ আত্তার স্কার্ফ জড়িয়ে লন্ডনে ৮০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে ইতিহাস গড়েন। এরপর থেকে অলিম্পিকে নিয়মিতই অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন সৌদি নারী।

২০১৩
বাইসাইকেল এবং মোটর বাইক চড়ার অনুমতি প্রদান

নারীরা প্রথমবারের মতো বাইসাইকেল এবং মোটর বাইক চালানোর অনুমতি পায়। যদিও নির্দিষ্ট কিছু এলাকার বাইরে চালানো যায় না। এবং এসব যানবাহন চালানোর সময় অবশ্যই কঠিনভাবে পর্দা মেনে চলতে হবে। এতো বিধিনিষেধ স্বত্তেও নারীরা প্রথমবারের মতো গতির আনন্দ নিতে শিখে ২০১৩ সালে।

২০১৩
সৌদি পার্লামেন্টে নারীদের অংশগ্রহণ

সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ প্রথমবারের মত ৩০ জন নারীকে পার্লামেন্টে নিয়োগ দেন। এর ফলে সরকারী বিভিন্ন পদে নারীদের অংশ গ্রহণ বাড়ে এবং সরকারি অফিস চালানোর একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় নারীদের।

২০১৫
নারীদের ভোটে অংশগ্রহণ এবং নির্বাচিত হবার সুযোগ

২০১৫ সালে সৌদি নারীরা প্রথমবারের মত ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। শুধু তাই নয় ভোটে প্রতিদ্বন্দীতা করার সুযোগও পান নারীরা। অর্থ্যাৎ নারীরা ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবার সুযোগ পান।

২০১৭
স্টক এক্সচেঞ্জের হেড হিসেবে নির্বাচিত হন একজন নারী

সৌদি স্টক এক্সচেঞ্জের হেড হিসেবে প্রথমবারের মত একজন নারী নির্বাচিত হন। সারাহ আল সুহাইমি নামের এই নারী ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইতিহাস গড়েন।

২০১৮
স্টেডিয়ামে খেলা দেখার সুযোগ পান নারীরা

প্রথমবারের মত নারীরা সরাসরি স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার সুযোগ পান। যদিও সব স্টেডিয়ামে নয়। সরকার কতৃক নির্ধারিত কিছু স্টেডিয়ামেই নারীরা খেলা দেখতে পারবেন। এবং অবশ্যই পর্দা প্রথা মেনে চলতে হবে।

২০১৮
নারীরা গাড়ি ড্রাইভ করার অনুমতি পান

২০১৮ সালের জুন মাসে নারীরা গাড়ি ড্রাইভ করার অনুমতি পান। এর আগে শুধু বাইসাইকেল এবং মোটরবাইক চালানোর অনুমতি ছিলো। এবার চার চাকার গাড়ি চালানোরও অনুমতি মিলেছে তাদের। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে পুরুষের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।

২০১৯
বিবাহ বিচ্ছেদের খবর মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া

নারীদের অজান্তেই বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যেতো। পুরুষরা কখন তাদের ডিভোর্স দিচ্ছে এসব খবর তারা দেরীতে পেতেন অথবা আদৌ পেতেন না। এখন সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। পুরুষরা নারীদের ডিভোর্স দিলে সেই মেসেজ নারীরা সাথে সাথেই মোবাইলে পেয়ে যাবেন। কিছুটা হাস্যকর মনে হলেও এটাও একটা অধিকার সৌদি নারীদের যা তারা পেয়েছে।


 

লেখাটি ডয়চে ভেলে এবং এবাউট হার ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে।

Exit mobile version